বৃহস্পতিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

‘হুকুমের আসামী’


বিএনপির চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আবারও ‘হুকুমের আসামী’ করা হয়েছে। কুমিল্লা জেলাধীন চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি উত্তম কুমার চক্রবর্তীর বরাত দিয়ে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে চৌদ্দগ্রাম এলাকায় বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে সাতজন যাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার এবং বেশ কয়েকজনকে অগ্নিদগ্ধ করার অভিযোগে দায়ের করা দুটি পৃথক মামলায় হুকুমদানকারী হিসেবে বিএনপি নেত্রীর নাম উল্লেখ করেছে পুলিশ। মামলা দুটিতে উপজেলা জামায়াতের আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে প্রধান আসামী করে ৫৬ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ১৫/২০ জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এই খবরের পরিপ্রেক্ষিতে বেগম খালেদা জিয়াকে ‘হুকুমের আসামী’ করার বিষয়টিই বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে। কারণ, এক মাসের বেশি সময় ধরে তিনি তার গুলশান অফিসে অবরুদ্ধ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বসবাস করছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও একের পর এক মামলায় তাকে ‘হুকুমের আসামী’ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, চৌদ্দগ্রামেরও আগে ২৪ জানুয়ারি রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানায় দুটি, ২৫ জানুয়ারি কুমিল্লার একই চৌদ্দগ্রাম থানায় অন্য একটি এবং ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার এক আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এসবের সঙ্গে চৌদ্দগ্রাম থানায় সর্বশেষ দায়ের করা দুটিসহ মোট মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয়টি। এগুলোর মধ্যে ঢাকার আদালতে জননেত্রী পরিষদের সভাপতির দায়ের করা মামলাটিকে আমলে নিয়ে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাকি পাঁচটি মামলারও তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
আমরা মনে করি, পুলিশ এবং ব্যক্তি বিশেষের মাধ্যমে একের পর এক মামলা দায়েরের পেছনে সরকারের উদ্দেশ্যে কোনো রাখঢাক নেই বললেই চলে। এর প্রমাণ পাওয়া যাবে একটি মাত্র তথ্যের উল্লেখ করলে। সে তথ্যটি হলো, আদালতে দায়ের করা মামলায় ঢাকা ভার্সিটির সাবেক ভিসি ও দেশবরেণ্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমদকেও ‘হুকুমের আসামী’ করা হয়েছে! অথচ প্রফেসর এমাজউদ্দিন সরাসরি কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত নন। তার ‘অপরাধ’, অবরোধকেন্দ্রিক সংকটের মধ্যে তিনি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। কোন এক এ বি সিদ্দিক দিয়ে করানো মামলায় তাকেও আসামী করা হয়েছে। খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, বিভিন্ন মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার পাশাপাশি বেছে বেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ দল দুটির অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদেরকেই সরাসরি বা হুকুমের আসামী করা হয়েছে। এসব আসামীর মধ্যে চৌদ্দগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের মতো এমন অনেকেও রয়েছেন যারা আগামীতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের তথা ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হতে পারেন এবং যাদের বিজয়ী হওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা রয়েছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যার পর পর মামলাও করা হচ্ছে এমন সব এলাকাতেই, যেসব এলাকায় ২০ দলীয় জোটের ভোটার ও জনসমর্থন অনেক বেশি।  নির্বাচনের সময় অভিযুক্ত কারো পক্ষে প্রার্থী হওয়া সম্ভব হবে না। এর সঙ্গে রয়েছে দণ্ড হয়ে যাওয়ার আশংকা। কারণ, সব কাজ ফেলে সরকার অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে মামলাগুলো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। এর উদ্দেশ্য কেবল একটাই হতে পারে- সত্য-মিথ্যাকে প্রমাণ হিসেবে সাজিয়ে যে কোনোভাবে অভিযুক্তদের সাজা বা দণ্ড দেয়া। আর একথা তো সবাই জানেন, দণ্ডিতজনেরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। তেমন অবস্থায় আওয়ামী লীগ ও তার জোটের দলগুলো ফাঁকা ময়দান পেয়ে যাবে। বেগম খালেদা জিয়ার পেছনেও এজন্যই বিশেষভাবে লেগে রয়েছে মামলার মিছিল।
আমরা মনে করি, কৌশল ও পরিকল্পনা হিসেবে চমৎকার হলেও তার বাস্তবায়ন সম্ভব নাও হতে পারে। বড় কথা, এর মধ্যে গণতন্ত্রসম্মত চিন্তা-চেতনার লেশমাত্রেরও সন্ধান মিলবে না। একই কারণে সরকারকেই এক সময় নিন্দা-সমালোচনার শিকার হতে হবে। সাধারণ মানুষও ধিক্কার না জানিয়ে পারবে না। কারণ, বিরামহীন প্রচারণা চালিয়েও ক্ষমতাসীনরা এখনো প্রমাণ করতে পারেননি যে, পেট্রোল বোমার মাধ্যমে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার নৃশংস কর্মকাণ্ডে বিএনপি বা জামায়াতের তথা ২০ দলীয় জোটের কোনো ভূমিকা রয়েছে বা আদৌ থাকতে পারে। অনুসন্ধানে বিপরীত যেসব তথ্য বেরিয়ে আসছে সেগুলোও ক্ষমতাসীনদের জন্য উৎসাহজনক নয়। এজন্যই  উচিত মিথ্যার বাণিজ্যে ইতি টানা এবং বেগম খালেদা জিয়ার মতো প্রধান জাতীয় নেত্রীর পাশাপাশি জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতাদের আসামী বানানোর হাস্যকর কিন্তু ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম থেকে নিবৃত হওয়া।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads