শনিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

আওয়ামী লীগের দুই রূপ : ক্ষমতায় গেলে এক রূপ বিরোধী দলে আরেক রূপ


আজ রোববার অবরোধের ৪১তম দিন। এই ১ মাস ১১ দিনে দৈনিক ‘প্রথম আলোর’ রিপোর্ট মোতাবেক ঝরে গেছে ২৭টি প্রাণ। এর মধ্যে পেট্রোল ও আগুনে বোমায় মারা গেছে ৫২ জন, সংঘর্ষে ২৭ জন, ক্রস ফায়ারে ১৯ জন। তারপরেও দেশে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটলে সরকার অস্থির হয়ে পড়ে, কেমন করে পরিস্থিতি শান্ত করা যায়। অথচ বাংলাদেশে আওয়ামী সরকার এ ব্যাপারে নির্বিকার। মানুষ মারা যাচ্ছে তাদের কোনো বিকার নাই। বরং এ মৃত্যুকেই তারা পুঁজি করেছে। এই লাশ দিয়েই তারা বিরোধী দলকে ঘায়েল করতে চায়। সাংবাদিকরা প্রধান মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি সংলাপে বসবেন কি না। প্রধানমন্ত্রীর হৃদয়হীন সাফ জবাব, কার সাথে আলোচনায় বসব? ঐ খুনিদের সাথে?
কে খুনি? কারা খুনি? এসবই এখন জ্বলন্ত প্রশ্ন। এসব প্রশ্ন নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা যায় না। সর্বত্র ভয় এবং আতংক। টেলিফোনে যদি আপনি কাউকে জিজ্ঞাসা করেন, ভাই দেশের অবস্থা কি? ওপার থেকে জবাব আসে, ভাই, টেলিফোনে বলা যাবে না । বাসায় আসুন, আর না হয় অফিসে আসুন, খোলামেলা আলোচনা করব। বোঝেন না ভাই, দেওয়ালেরও কান আছে। অফিস আদালতে এগুলো আর কেউ খোলা খুলি আলোচনা করেন না। তাদেরও একই কথা, দেওয়ালেরও কান আছে। কখন কোন ফাঁকে র‌্যাব বা পুলিশ শুনে ফেলে, আর উঠিয়ে নিয়ে যায়। একবার উঠাতে পারলেই হলো। আর আপনার খবর পাওয়া যাবে না। আপনি ভ্যানিশড  হয়ে যাবেন।
আওয়ামী সরকার পেট্রোল বোমা বিস্ফোরণকে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করছে। আগেই বলেছি যে পেট্রোল বোমা বিষ্ফোরণে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫২ ব্যাক্তি নিহত হয়েছেন। কারা মেরেছে এসব পেট্রোল বোমা? আওয়ামী লীগ সমস্ত পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের দায় দায়িত্ব বিএনপি জামায়াতের ঘাড়ে চাপিয়েছে। শুধু চাপিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। এটি করে তারা বিএনপি জামায়াতকে প্রথমে বানিয়েছে স্বাধীনতা বিরোধী এবং তার পরে সন্ত্রাসী জঙ্গী সংগঠন। তাও আবার দেশের সন্ত্রাসী নয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের আলকায়দা, তালেবান এবং আই এস বা ইসলামিক স্টেটের মতো দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সংগঠন। আওয়ামী লীগের এই অভিযোগ মারাত্মক। তাই এ সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখা  দরকার।
বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট মোতাবেক বিগত দিনগুলোতে যেসব স্থান থেকে এবং যাদের নিকট থেকে   পেট্রোল বোমা উদ্ধার করা হয়েছে তার একটি সংক্ষিপ্ত খতিয়ান নিচে দেয়া হল। এই খতিয়ানটি বিভিন্ন অনলাইন এবং প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক  মিডিয়া থেকে নেয়া হয়েছে।
দুই
চলমান বিরোধী দলের অবরোধের মধ্যেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পেট্রোল বোমাসহ সরকারি দলের অসংখ্য নেতা কর্মীকে হাতে নাতে আটক করেছে পুলিশ। কিন্তু সরকারি দলের পরিচিতি প্রকাশ পাবার পরেই ওইসব নেতা কর্মীদেরকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা-
১) ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মহা নগরীর আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনী এলাকার যুবলীগ কার্যালয় থেকে ১০টি পেট্রোলবোমা উদ্ধার করে পুলিশ। (শীর্ষ নিউজ, ৮ ফেব্রুয়ারি)
২) ৪ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ছোনাব এলাকায় ভুলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা লোকমান হোসেনের একটি ঝুটের গোডাউনে বোমা বানানোর সময় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতা রহমত উল্লাহসহ চারজন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতাল ও স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষ দর্শীরা জানায়, বিস্ফোরণের পরপরই ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ঘটনাস্থলে এসে বিস্ফোরণের আলামত সরিয়ে ফেলেন। (যুগান্তর, ৫ ফেব্রুয়ারি)
৩) ৪ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথ দীঘি ইউনিয়নের কেসকি মোড় এলাকা থেকে পেট্রোল বোমাসহ মানিক ও বাবুল নামে দুই যুবলীগের নেতাকে আটক করে পুলিশ, কিন্তু পরে ছেড়ে দেয়। (শীর্ষ নিউজ, ৪ ফেব্রুয়ারি)
৪) ৪ ফেব্রুয়ারি বুধবার দুপুর ২টার দিকে কুষ্টিয়ার মিরপুরে পেট্রোল বোমাসহ ছাত্রলীগের এক নেতাকে পুলিশ আটক করে। পরে অজ্ঞাত কারণে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। (আমার দেশ, ৭ ফেব্রুয়ারি)
৫) ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে র‌্যাবের অভিযানে চট্টগ্রামের টাইগার পাস রেলওয়ে কলোনী থেকে ৯টি পেট্রোল বোমা, ২টি ককটেল, ৭টি কিরিচ, ২টি রামদা, ৯টি লোহার পাইপসহ ছয় ব্যক্তি আটক হয়। ঘটনার মূল হোতা মুন্না স্বীকার করে, সে নিহত যুবলীগ নেতা হুমায়ুন কবির মুরাদের ছোট ভাই এবং সে নিজেও আওয়ামী লীগ করে। (ইত্তেফাক, ৪ ফেব্রুয়ারি)
৬) ২৫ জানুয়ারি ফেনী শহরের টেলিফোন ভবন থেকে ৭টি পেট্রোল বোমাসহ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিমের ভাতিজা আজিম উদ্দিনকে আটক করেছে পুলিশ। (দিনকাল, ২৫ জানুয়ারি)
৭) ১০ জানুয়ারি বেলা সোয়া ২টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে ৩টি হাতবোমার বিস্ফোরণ হয়। এতে জড়িত থাকার অভিযোগে হাতে নাতে গ্রেফতার হয় সাদিক নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী, যদিও পরে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। (যুগান্তর, ১১ জানুয়ারি)
৮) গত ১ জানুয়ারি রাত পৌনে ৮টার দিকে মাগুরা শহরের পারনান্দুয়ালি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে পেট্রোল দিয়ে বাসে আগুন দেয়ার সময়ে ৩ ছাত্রলীগ কর্মী আটক হয়, যার মধ্যে ছিল জেলা ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সাজ্জাদ মোল্লা, ছাত্রলীগ কর্মী লিমন ও রানা। এদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় পেট্রোল ভর্তি দুটি বোতল ও দিয়াশলাই। (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২ জানুয়ারি)
৯) লক্ষ্মীপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয় যে, পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগ নেতা কামরুল হোসেনের নেতৃত্বে গত ১ জানুয়ারি রাতে লক্ষ্মীপুর মহিলা কলেজের সামনে যাত্রীবাহী সিএনজিতে পেট্রোলবোমা হামলা চালানো হয়, যাতে মারা যায় ২ জন। ওই পেট্রোলবোমা হামলায় স্থানীয় দর্জি দোকান কর্মচারী ও যুবলীগ কর্মী পিচ্চি রুবেল, শামীম, মাসুদ ও জেলা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক মুরাদ হোসেন জয়সহ ১০ থেকে ১২ জন অংশগ্রহণ করে। (শীর্ষ নিউজ, ৫ ফেব্রুয়ারি)
১০) ১০ ফেব্রুয়ারি দুপুর ৩টার দিকে বগুড়ায় ককটেল বানানোর সময় বিস্ফোরণে সোহাগ (২২) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীর ডান হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। আহত সোহাগ বগুড়া সদর উপজেলার গোকুল ইউনিয়নের বড়ধাওয়া গ্রামের সফিকুল ইসলাম সফিকের ছেলে এবং স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি গণি’র ভাতিজা। (শীর্ষ নিউজ)
লক্ষণীয় যে, ৪ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া, ও চট্টগ্রামে সরকারি দলের নেতাদের কাছে যে বিপুল পরিমাণে পেট্রোলবোমা পাওয়া গেছে, তা থেকে অনেকেই ধারণা করছেন, এসব কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং কেন্দ্রীয় নির্দেশেই সরকারি দলের নেতাকর্মীরা সারা দেশে নাশকতায় লিপ্ত।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থী অধ্যাপক আব্দুল মান্নান স্বীকারোক্তি করেছেন, পেট্রোল বোমা সরবরাহ করেছে ছাত্রলীগ। দেশের বেসরকারি টেলিভিশন ‘সময়’ টিভির ‘সম্পাদকীয়’ টকশোতে শুক্রবার রাতে তিনি অকপটে বলেন, ‘ছাত্রলীগের যারা পেট্রোল বোমাসহ ধরা পড়েছে তারা সোজা বাংলায় ব্যবসায়ী। এরা পেট্রোল বোমা বানায় এবং বানিয়ে বিক্রি করে, ব্যবসা করে। মানুষ মারার কন্ট্রাক্ট নেয় যে এইখানে বাসে বোমা মারলে এত টাকা, মানুষ মারলে এত টাকা।’ অন্যদিকে, মহাজোট সরকারের অন্যতম সুবিধাভোগী ভোটবিহীন সংসদের বর্তমান এমপি মাইনুদ্দিন খান বাদল ৭১ টিভি সংযোগ অনুষ্ঠানে ৬ ফেব্রুয়ারি জানান, ‘২০-দলের আন্দোলনকে সন্ত্রাসী কর্মকা- হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সফল হয়েছে মহাজোট সরকার। এ ক্ষেত্রে যা যা করা দরকার সবই করতে সরকার সক্ষম হয়েছেন।’
চলমান অবরোধের মধ্যে পেট্রোলবোমায় নাশকতার কার্যকারণ নিয়ে এরপরে আর কোনো ব্যাখার প্রয়োজন আছে কি?
॥ তিন ॥
চলমান আন্দোলনে এস এস সি পরীক্ষাকে অবরোধ এবং হরতালের বাইরে রাখার জন্য আওয়ামী লীগ বার বার দাবি তুলছে। এসএসসি পরীক্ষাকে চলমান আন্দোলনের বাইরে না রাখার কারণে বিএনপি ও জামায়াতকে তুলো ধুনা করছে আওয়ামী লীগ। হরতাল এবং অবরোধের কারণে এসএসসি পরীক্ষা বিঘিœত হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী অনেক অসুবিধায় পড়ছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার্থীদের প্রতি জানাচ্ছি পূর্ণ সমবেদনা। যে ১৪ লাখ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা নিয়ে অসুবিধায় পড়েছে তাদের প্রতি পূর্ণ সমবেদনা জানিয়েও বলছি যে, এসএসসি পরীক্ষা পিছেয়ে দেয়ার কাজকে সমালোচনা করার অধিকার কি আওয়ামী লীগের রয়েছে? কেয়ার টেকার সরকার প্রতিষ্ঠা করার দাবিতে আওয়ামী লীগ মাসের পর মাস অবরোধ এবং হরতাল করেছে। এখন সেসব কাজ হচ্ছে যেগুলো আওয়ামী লীগ ১৯৯৪-৯৬ সাল পর্যন্ত কেয়ার টেকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে করেছে। লীগের  আন্দোলনে এসএসসি পরীক্ষা অন্তত ৬ বার পেছাতে হয়েছে। আমরা নিচে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফলে পরীক্ষা পিছানোর একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা দিলাম
☛ ২০০২ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় পর পর দু’বার হরতাল দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ।
☛ ২০০৫ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় লাগাতার হরতাল দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
☛ ১৯৯৫ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ও ৮ দিন হরতাল দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ।
☛ ১৯৯৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় আওয়ামী লীগের অবরোধের কারণে ৩ মাস পরীক্ষা পিছিয়েছিল।
☛ ১৯৯৬ তেই স্কুল-কলেজে তালা লাগিয়ে দিয়েছিলো হাসিনা বাহিনী। সরকারি অফিসারকে রাস্তায় উলঙ্গ করে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল তখন। মনে করে দেখুন ১৯৯৮ সালের ১৫ নবেম্বর, হাতে তসবিহ এবং মাথায় হিজাব পরে জাতির কাছে হরতাল না করার ওয়াদা করে হাসিনা বলেছিলেন, বিরোধী দলে গেলেও আমরা কখনও হরতাল করব না। কিন্তু ২০০১ সালেই তিনি ডিগবাজি মারেন। পরীক্ষার সময়ই দেন একাধিকবার হরতাল। ১৯৯১ থেকে ৯৬, এই ৫ বছরে ১৭৩ দিন এবং ২০০১ থেকে ২০০৭ এই ৬ বছরে ১৩০ দিন হরতাল-অবরোধ দিয়েছিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
ওপরের এসব ঘটলাবলী দেখে আওয়ামীওয়লাদের দ্বৈত নীতির পরিচয় পাওয়া যায়। তারা যখন ক্ষমতায় থাকে তখন ‘হরতাল-অবরোধ’ হারাম হয়ে যায়, ‘মিছিল-মিটিং’ রাষ্ট্র বিরোধী কাজ হয়ে যায়, রাজপথে ‘পোস্টার-ব্যানার’ টাঙ্গানো এবং ‘লিফলেট’ সার্কুলেট করা ধ্বংসাত্মক কাজ হয়ে যায়। আর ককটেল ও বোমা? ওগুলোতো আলকায়দা এবং তালেবানী কাজ হয়ে যায়। কিন্তু তারা যখন বিরোধী দলে থাকে তখন ওপরের সবগুলো কাজই বিপ্লবের মতো জায়েজ হয়ে যায়। এসব দেখে-শুনেই দেবতারা স্বর্গে বসে ভবিষ্যত আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে এই দুটি চরণ রচনা করেছিলেন :
দেবতার বেলা লীলা খেলা
পাপ হয়েছে মোদের বেলা
আসিফ আরসালান 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads