বুধবার, ২৪ জুন, ২০১৫

সরকারের দ্বিমুখী নীতি


বিভিন্ন এলাকার মেয়র এবং নির্বাচিত অন্য জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত, অপসারণ ও গ্রেফতার করার এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার মতো কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সরকার দুই রকম নীতি-কৌশল অবলম্বন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিছু উদাহরণ উল্লেখ করে বুধবার একটি দৈনিক পত্রিকার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের ব্যাপারেও সরকার নগ্নভাবেই পক্ষপাতিত্ব করছে। যেমন এই সময়ে গম কেলেংকারীর সঙ্গে জড়িত একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সহসা হবে বলেও মনে হচ্ছে না। আরেকজন মন্ত্রী দুদকের দায়ের করা মামলায় দন্ডিত হয়েছিলেন। কিন্তু তাকে রেহাই দেয়া হয়েছে, এখনো তার মন্ত্রিত্ব যায়নি। একই ধরনের খবর জানা যাচ্ছে আরো অনেকের সম্পর্কেও। অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর তথা বিরোধী দলের কেউ হলে তাদের সামান্য ছাড় দেয়া হচ্ছে না। দেশের প্রতিটি সিটি করপোরেশনের কর্তৃত্ব দখলে নেয়ার গোপন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সরকার একদিকে বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচিত মেয়র ও অন্য প্রতিনিধিদের সাজানো মামলায় ফাঁসাচ্ছে, অন্যদিকে গ্রেফতারের পাশাপাশি পুলিশকে দিয়ে অবিশ্বাস্য দ্রুততার সঙ্গে দাখিল করাচ্ছে চার্জশিট। একযোগে চলছে স্থানীয় সরকার আইনের অপব্যবহার করে মেয়রদের সাময়িক বরখাস্ত ও অপসারণ করার কার্যক্রম। রাজশাহী, সিলেট, খুলনা এবং গাজীপুরের পাশাপাশি কুমিল্লা ও বরিশালসহ অন্য সব এলাকার মেয়রদের বিরুদ্ধেও তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। তাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে কারাগারে ঢোকানোর এবং সাময়িক বরখাস্ত করার কাজ শেষ হওয়ার পথে। স্মরণ করা দরকার, ২০১৩ সালের জুন-জুলাই মাসে কুমিল্লা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরে যাওয়ার পর থেকেই ফন্দি এঁটে এসেছেন ক্ষমতাসীনরা, যার বাস্তবায়ন ঘটানো হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে। সরকারের এই দ্বিমুখী নীতির ফল যে শুভ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই সে সম্পর্কেও এরই মধ্যে জানা যাচ্ছে নানাভাবে। যেমন গতকাল বুধবারই একটি জাতীয় দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, জনগণের নির্বাচিত প্রতিধিরা না থাকায় ঢাকা জেলা পরিষদে আমলাদের দৌরাত্ম্য চরমে পৌঁছেছে। সেখানে একজন নারী প্রশাসক এবং হিন্দু প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার যৌথ শাসন চলছে। তারা যে গ্রামে শত বছরেও কোনো হিন্দুর বসবাস ছিল না তেমন একটি গ্রামেও হিন্দুদের মন্দির সংস্কারের নামে লাখ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়েছেন। এটা একটি ঘটনা মাত্র। এ রকম এবং এর চাইতেও অনেক বড় বড় অসংখ্য ঘটনা ঘটে চলেছে দেশজুড়ে। প্রতিটি সঙ্গেই জড়িত রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন। আর সব লেনদেনের পেছনে যে কেবল ক্ষমতাসীনরাই থাকতে পারেন এবং রয়েছেনও- সে কথা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। বড় কথা, ইউনিয়ন পরিষদ এবং জেলা-উপজেলা থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত বিরাজ করছে একই অবস্থা। চলছেও একই ধরনের কর্মকান্ড। কিন্তু দালিলিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও পার পেয়ে যাচ্ছেন সকলে। হাতেনাতে ধরা পড়লেও কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। কারণ সকলে ক্ষমতাসীন দলের লোক, অনেকে নিজেরাই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী কিংবা ক্ষমতাধর এমপি।
আমরা মনে করি, এভাবে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকেই শুধু অচল করা হচ্ছে না, দেশের উন্নয়ন কর্মকা-কেও করা হচ্ছে বাধাগ্রস্ত। তাই বলে সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে কিন্তু কোনো রাখঢাক করা হচ্ছে না। ভোট জালিয়াতি ও সন্ত্রাসের পথে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দখল নিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। দ্বিতীয় পর্যায়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিজেদের একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন তারা। জনসেবা ও উন্নয়ন নয়, অন্তরালের উদ্দেশ্য আসলে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং নিজেদের ও দলীয় লোকজনের পকেট স্ফীত করা। জাতীয় নির্বাচনও রয়েছে তাদের পরিকল্পনায়। এজন্যই সর্বাত্মক দমন-নির্যাতন চালানোর এবং মেয়র ও কাউন্সিলরদের সাজানো মামলায় ফাঁসানোর মধ্য দিয়ে এমন এক ত্রাসের রাজত্ব তারা কায়েম করেছেন যাতে পরবর্তী কোনো নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের কেউ এমনকি প্রার্থী হওয়ারও সাহস না পান। যাতে ফাঁকা মাঠ পেয়ে যায় আওয়ামী লীগ। এজন্যই দেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে দখল ও তছনছ করতে চাচ্ছে সরকার। এমন নীতি- কৌশল ও কর্মকান্ড অবশ্যই গণবিরোধী এবং অগ্রহণযোগ্য। আমরা মনে করি, গণতন্ত্র এবং জাতীয় স্বার্থ ও উন্নয়নের ব্যাপারে আদৌ সদিচ্ছা থাকলে সরকারের উচিত অবিলম্বে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার ও মামলার অভিযান বন্ধ করা। সরকারকে একই সাথে মেয়র ও কাউন্সিলরসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সকলকে যার যার পদে পুনর্বহাল করতে হবে। বড়কথা, আইন প্রয়োগ এবং কোনো ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে দুই রকমের নীতি অবলম্বন করা চলবে না। অপরাধী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপি হলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads