শনিবার, ১৩ জুন, ২০১৫

অবাঞ্ছিত প্রবণতা


‘জমি রাষ্ট্রের, অফিস আওয়ামী লীগের’। এটি বাংলাদেশ প্রতিদিনে মুদ্রিত একটি খবরের শিরোনাম। গতকাল ১৩ জুন মুদ্রিত খবরটিতে বলা হয়, ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার জমি দখল করে নিজেদের কার্যালয় নির্মাণ করছে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো। জানা গেছে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এমপি ও নেতারাই এ দখলদারিত্বে উৎসাহ দিয়ে আসছেন। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে এসব অফিসের সাইনবোর্ডও বদলে গেছে। সব মিলিয়ে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরগুলো। সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। এখনও অব্যাহত  রয়েছে সরকারি দলের অফিস তৈরির হিড়িক। আর বাড়তি হিসেবে যোগ হয়েছে নামসর্বস্ব সংগঠনের তৎপরতা। ২০০৯ সালের আগে যেখানে অন্য কোনো সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের অফিস ছিল সেগুলো এখন হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের।
এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিকের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাষ্ট্রের জমি দখল করে রাজনৈতিক অফিস তৈরি করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারপরও প্রভাবশালীরা এটি করে যাচ্ছেন। সিটি করপোরেশনের জমি দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের দুই সিটিতে যারা মেয়র নির্বাচিত হয়ে এসেছেন, তাদের উচিত এখন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া। উল্লেখ্য যে, ঢাকার কূটনৈতিক জোনও রেহাই পায়নি এ ধরনের দখলদারিত্ব থেকে। দূতাবাসের আশপাশের ফুটপাত দখল করে চলছে অফিস বানানোর তৎপরতা। রাজধানীর বারিধারায় মার্কিন দূতাবাসের পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে যুবলীগের অফিস। এ অফিসের কারণে দূতাবাসও অনেকটা অস্বস্তিতে রয়েছে। অভিজাত এলাকা গুলশান-২ নম্বর মোড়ে ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ অফিস। পাশাপাশি রয়েছে জাতীয় পার্টির অফিসও। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রভাবশালী নেতাদের মদদে গত কয়েক বছর ধরে ফুটপাতসহ সরকারি জায়গা দখল করেছে বিভিন্ন সংগঠন। গড়ে তোলা হয়েছে শতাধিক দলীয় কার্যালয়।
ফুটপাতসহ সরকারি জায়গা দখল করে সরকারি ঘরানার লোকজন যে অন্যায় কর্ম করেছে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। উপরন্তু রাজনৈতিক কর্মকান্ডের নামে এসব কার্যালয়ের আশপাশের এলাকায়  চাঁদাবাজিসহ রাতে নানা অপকর্ম চলার অভিযোগ রয়েছে। সরকারের জন্য এবং দেশের রাজনীতির জন্য এগুলো মন্দ উদাহরণ। দেশে সরকার আছে, আইন-আদালত আছে, পুলিশ-প্রশাসন আছে তারপরেও ফুটপাত ও জমি দখল করে এমন তৎপরতা চলে কী করে? সকারি দলের সাথে সম্পর্ক থাকলে তারা কি আইনের ঊর্ধ্বে চলে যায়? আমরা মনে করি এক্ষেত্রে সরকার ও সরকারি দলের করণীয় আছে। সরকার প্রশাসনের মাধ্যমে দখলের অন্যায় কর্মকে প্রতিহত করতে পারে। আর সরকারি দল দলের গঠনতন্ত্র ও ঐতিহ্যের আলোকে দল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের শৃঙ্খলায় আনতে পারে এবং দেশ ও জনগণের সেবায় উদ্বুদ্ধ করতে পারে। আসলে কোনো দল বক্তৃতা-বিবৃতিতে যে চমৎকার কথাগুলো বলেন, তার অনুশীলন কিন্তু শুরু করতে হয় তৃণমূল পর্যায় থেকেই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বর্তমান সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে গঠনতন্ত্র ও ঐতিহ্যকে পাশ কাটিয়ে দল ভারী করাই যেন রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। ফলে নীতিহীন ও সুবিধাবাদী লোকজন এখন সহজেই রাজনীতি করার সুযোগ পাচ্ছে। এটা আমাদের রাজনীতির জন্য কোনো ভালো খবর নয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহল উপলব্ধি করলেই মঙ্গল।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads