সোমবার, ২২ জুন, ২০১৫

কথা ও কাজে মিল থাকা প্রয়োজন


আমাদের রাজনৈতিক নেতারা তো প্রায়ই বলে থাকেন যে, ব্যক্তির চাইতে দল বড়, আর দলের চাইতে দেশ বড়। এমন কথা বলে তারা বোঝাতে চান যে, ব্যক্তি বা দলের স্বার্থে নয়, তারা মূলত কাজ করেন দেশ তথা জনগণের স্বার্থে। কী চমৎকার কথা! এমন কথা শুনলে শ্রোতা ভাবতে পারেন, আমাদের রাজনৈতিক নেতারা কতই না নিষ্ঠাবান এবং দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। আসলে কি তাই? কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বাস্তব চিত্র আসলে উল্টো। বহু রাজনীতিবিদের আচার-আচরণ দেখে জনমনে এখন এমন ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে- মুখে যত কথাই বলুক না কেন, রাজনীতিবিদদের কাছে দেশের চাইতে দলের স্বার্থ বড়, আর দলের চাইতেও বড় ব্যক্তি স্বার্থ।
পত্র-পত্রিকার পাতা উল্টালেই উপরোক্ত বক্তব্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বহু উদাহরণ  লক্ষ্য করা যাবে। প্রথম আলো পত্রিকার ২১ জুন সংখ্যায় প্রথম পাতায় মুদ্রিত একটি খবরের শিরোনাম ‘প্রয়োজন নেই তবু দলের স্বার্থে বাড়তি গম কেনা’। খবরটিতে বলা হয় : প্রয়োজন নেই কিন্তু মন্ত্রী-এমপি ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের স্বার্থে সরকার আরও এক লাখ টন গম সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাও আবার বাজারদরের চেয়ে কেজিতে ১০ টাকা বেশিতে। ফলে সরকারের ক্ষতি হবে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। উল্লেখ্য যে, মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের চাহিদাপত্র দেওয়ার পর সরকার অতিরিক্ত গম সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়। বাজারে প্রতিকেজি গমের দাম ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকা। আর সরকার কিনছে ২৮ টাকা দরে। প্রতি কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা মুনাফার কারণে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা সরকারি গুদামে গম সরবরাহে বেশ উৎসাহী হয়ে উঠেছেন। এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব হোসেন বলেন, বাজার দরের সঙ্গে গমের সংগ্রহ মূল্যের পার্থক্য ১০ টাকা। এটা অস্বাভাবিক। সাধারণত এই পার্থক্য হয় দুই থেকে তিন টাকা। অতিরিক্ত মুনাফার কারণেই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত হয়ে পড়বে,  এটাই স্বাভাবিক। সরকারি গুদামে গম সংগ্রহ বাড়াতে সরকারদলীয় ৮০ জন নেতা খাদ্যমন্ত্রীর কাছে চাহিদাপত্র বা ডিও লেটার পাঠিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬ জন মন্ত্রী, ৬০ জন এমপি এবং অন্যরা সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমপির মনোনীত ব্যক্তিরা গম সরবরাহ করছেন বলে জানা গেছে। বেশ কয়েকটি এলাকায় এমপিরা নিজেই গম সরবরাহ করেছেন।
প্রয়োজন ছাড়া গম কিনে যেভাবে রাষ্ট্রের ১০০ কোটি টাকা ক্ষতি করা হলো তা একটি মন্দ উদাহরণ হয়ে রইবে। এতে হয়তো দল ও দলের কিছু লোক উপকৃত হবে, কিন্তু ক্ষতির বোঝা বইতে হবে দেশ ও জনগণকে। আর এ জাতীয় অনৈতিক কর্মকা-ের ফল আখেরে দলের জন্য কি কোনো উপকার বয়ে আনবে? গম ক্রয় তথা সংগ্রহ কর্মসূচিকে ঘিরে গত কিছুদিনে দেশে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গেছে। সহজ প্রাপ্তির লোভের অনেক জায়গায় সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিবাদ, মারামারি, এমনকি গোলাগুলীর ঘটনাও ঘটেছে। এতে দলের ঐক্য ও শৃঙ্খলার ক্ষতি হয়েছে। নিজেদের মধ্যে সংহতির বদলে শত্রুতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এসব ঘটনা জনমনে সরকার ও সরকারি দলের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণার মাত্রা বাড়িয়েছে। তাই নিজেদের স্বার্থেই এইসব বিষয়ে সরকারের আত্মসমালোচনা প্রয়োজন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads