‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ বলে বছর কয়েক আগে পর্যন্তও যে প্রবাদ বাক্যটি বাংলাদেশে চালু ছিল সেটা এখন ইতিহাসের বিষয় হতে চলেছে। কারণ, মাছ বহু বছর আগেই সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার অনেক বাইরে চলে গেছে। খুব কম সংখ্যক মানুষই আজকাল মাছ খাওয়ার সুযোগ পায়। রুই-কাৎলা ধরনের বড় বড় মাছের তো প্রশ্নই ওঠে না, সাধারণ মানুষ এমনকি ছোট কোনো মাছও সহজে কিনে খেতে পারে না। কই ও বোয়ালের মতো মাছগুলোও মানুষের স্মৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। এতকিছুর পরও মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছে ভাত- তা সে ভাত যতো মোটা ও কম দামের চালেরই হোক না কেন। কিন্তু বর্তমান সরকারের নয় বছরে সে চালও সাধারণ মানুষের নাগালের তথা ক্রয় ক্ষমতার বাইরে যাওয়ার পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। সে কারণে বাধ্য হয়ে মানুষ চাল কেনা এবং ভাতের পরিমাণ কমাতে শুরু করেছে। একটি জাতীয় দৈনিকের খবরের শিরোনামেই জানানো হয়েছে, ‘ভাত কম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ’। বেশ কয়েকজন চাকরিজীবী নারী-পুরুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রকাশিত রিপোর্টে জানানো হয়েছে, কারো বেতন যদি বছরে দেড় হাজার টাকা বেড়ে থাকে তাহলে অন্যদিকে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল এবং বাড়ি ভাড়া বেড়ে গেছে অন্তত আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। এসবের সঙ্গে রয়েছে চাল-ডাল-তেলসহ নিত্যপণ্যের মূল্য। সবকিছুর দাম শুধু বাড়ছেই।
এ প্রসঙ্গেই এসেছে চালের দামের কথা। বিভিন্ন গণমাধ্যমের রিপোর্টে জানা গেছে, মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে কোনো কোনো চালের দাম বেড়েছে এমনকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশÑ টিসিবিও স্বীকার করেছে, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় মোটা চালের দাম বেড়েছে ৪২ শতাংশের বেশি। গত বছর যে চাল ৩০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যেতো সেটাই এখন ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গণমাধ্যমের রিপোর্টে জানানো হয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে মোটা চাল মানভেদে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৫০ থেকে ৫৪ টাকা এবং সরু চাল ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকায় সবচেয়ে জনপ্রিয় কয়েকটি ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল দীর্ঘদিন পর্যন্ত ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু সে মিনিকেটের দামই বাড়তে বাড়তে এখন ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায় উঠে গেছে। আরো উন্নত মানের নাজিরশাইলের দাম এখন ৬০ টাকার বেশি।
এমন অবস্থায় আয় যেহেতু বাড়েনি এবং বাড়ার সম্ভাবনাও নেই, সে কারণে বিশেষ করে নি¤œ আয়ের মানুষ নিজেরাই রেশনিং তথা খাদ্যের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছে। তারা ভাতের পরিমাণ অনেক কমিয়ে দিয়েছে। আগে যারা দু’বেলা পেট ভরে ভাত খেতো এখন তারাই এক বেলা আধাপেটা খেয়ে থাকছে। কারণ, এ ছাড়া উপায় নেই তাদের। ওদিকে ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল ও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী না হওয়ায় এবং মাঝখানে হাওর এলাকায় বিষাক্ত ভারতীয় ইউরেনিয়ামযুক্ত পানিতে ফসল ও জমি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যে চালের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চালের মজুদ কমে যাওয়ার বিষয়টি। শস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য সরকার কাবিখা ধরনের কর্মসূচির পাশাপাশি ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করার ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করার ফলেও চালের মজুদ তলানিতে এসে ঠেকেছে। অর্থাৎ সব মিলিয়েই চালের সরবরাহ বাড়ার যেমন সম্ভাবনা নেই তেমনি নেই দাম কমার সম্ভাবনাও। একই কারণে সাধারণ মানুষের পক্ষে ভাতের পরিমাণ বাড়ানোও সম্ভব হবে না। মানুষ এমনকি এক বেলাও পেট ভরে ভাত খেতে পারবে কি না তা নিয়েও এরই মধ্যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
আমরা মনে করি, এমন অবস্থা সকল বিচারেই অত্যন্ত ভীতিকর এবং এ ব্যাপারে সরকারের জন্য দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ থাকতে পারে না। কারণ, চালসহ কোনো পণ্যের দামই রাতারাতি বাড়ায়নি ব্যবসায়ী-মহাজনরা। দাম বেড়ে আসছে বহুদিন ধরেই। কিন্তু কোনো পর্যায়েই লোক দেখানো ধমক দেয়ার এবং লম্বা আশ্বাস শোনানোর বাইরে মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার ফলপ্রসূ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এবারও ব্যতিক্রম ঘটেনি বলেই একদিকে দাম শুধু লাফিয়ে বেড়ে চলেছে, অন্যদিকে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের। তারা এমনকি ভাতের পরিমাণ কমিয়ে দিতেও বাধ্য হয়েছে। বলা দরকার, অবস্থা এমন হতে পারতো না, সরকার যদি সময় থাকতে এ বিষয়ে তৎপর হতো। অন্যদিকে প্রমাণিত সত্য হলো, চাঁদা ও কমিশনসহ সহজবোধ্য কিছু কারণে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সাধারণত নেয়ও না। একই কারণে ব্যবসায়ী-মহাজনরাও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে যথেচ্ছভাবে। এবারও করতে শুরু করেছে রমযানের আগে থেকেই। একই কারণে দামও চলে যাচ্ছে মানুষের নাগালের অনেক বাইরে। সব কিছুর পেছনে রয়েছে সরকারের প্রশ্রয়। অতীতেও একই কারণে মানুষকে কষ্ট ও ভোগান্তির কবলে পড়তে হয়েছে। সাধারণ মানুষের তো বটেই, নাভিশ্বাস উঠেছে এমনকি মধ্যবিত্ত ও উচ্চ বিত্তের মানুষদেরও।
আমরা মনে করি, অসৎ ও মুনাফাখোর টাউট ব্যবসায়ী-মহাজনদের প্রশ্রয় ও সহযোগিতা দেয়ার পরিবর্তে সরকারের উচিত এখনই জরুরি ভিত্তিতে এবং কঠোরতার সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা ও চালসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের মূল্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া। আমদানি করে হলেও বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ানো দরকার। না হলে এক বেলা ভাত খাওয়ার মতো অবস্থাও থাকবে না মানুষের।
এ প্রসঙ্গেই এসেছে চালের দামের কথা। বিভিন্ন গণমাধ্যমের রিপোর্টে জানা গেছে, মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে কোনো কোনো চালের দাম বেড়েছে এমনকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশÑ টিসিবিও স্বীকার করেছে, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় মোটা চালের দাম বেড়েছে ৪২ শতাংশের বেশি। গত বছর যে চাল ৩০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যেতো সেটাই এখন ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গণমাধ্যমের রিপোর্টে জানানো হয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে মোটা চাল মানভেদে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৫০ থেকে ৫৪ টাকা এবং সরু চাল ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকায় সবচেয়ে জনপ্রিয় কয়েকটি ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল দীর্ঘদিন পর্যন্ত ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু সে মিনিকেটের দামই বাড়তে বাড়তে এখন ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায় উঠে গেছে। আরো উন্নত মানের নাজিরশাইলের দাম এখন ৬০ টাকার বেশি।
এমন অবস্থায় আয় যেহেতু বাড়েনি এবং বাড়ার সম্ভাবনাও নেই, সে কারণে বিশেষ করে নি¤œ আয়ের মানুষ নিজেরাই রেশনিং তথা খাদ্যের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছে। তারা ভাতের পরিমাণ অনেক কমিয়ে দিয়েছে। আগে যারা দু’বেলা পেট ভরে ভাত খেতো এখন তারাই এক বেলা আধাপেটা খেয়ে থাকছে। কারণ, এ ছাড়া উপায় নেই তাদের। ওদিকে ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল ও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী না হওয়ায় এবং মাঝখানে হাওর এলাকায় বিষাক্ত ভারতীয় ইউরেনিয়ামযুক্ত পানিতে ফসল ও জমি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যে চালের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চালের মজুদ কমে যাওয়ার বিষয়টি। শস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য সরকার কাবিখা ধরনের কর্মসূচির পাশাপাশি ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করার ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করার ফলেও চালের মজুদ তলানিতে এসে ঠেকেছে। অর্থাৎ সব মিলিয়েই চালের সরবরাহ বাড়ার যেমন সম্ভাবনা নেই তেমনি নেই দাম কমার সম্ভাবনাও। একই কারণে সাধারণ মানুষের পক্ষে ভাতের পরিমাণ বাড়ানোও সম্ভব হবে না। মানুষ এমনকি এক বেলাও পেট ভরে ভাত খেতে পারবে কি না তা নিয়েও এরই মধ্যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
আমরা মনে করি, এমন অবস্থা সকল বিচারেই অত্যন্ত ভীতিকর এবং এ ব্যাপারে সরকারের জন্য দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ থাকতে পারে না। কারণ, চালসহ কোনো পণ্যের দামই রাতারাতি বাড়ায়নি ব্যবসায়ী-মহাজনরা। দাম বেড়ে আসছে বহুদিন ধরেই। কিন্তু কোনো পর্যায়েই লোক দেখানো ধমক দেয়ার এবং লম্বা আশ্বাস শোনানোর বাইরে মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার ফলপ্রসূ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এবারও ব্যতিক্রম ঘটেনি বলেই একদিকে দাম শুধু লাফিয়ে বেড়ে চলেছে, অন্যদিকে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের। তারা এমনকি ভাতের পরিমাণ কমিয়ে দিতেও বাধ্য হয়েছে। বলা দরকার, অবস্থা এমন হতে পারতো না, সরকার যদি সময় থাকতে এ বিষয়ে তৎপর হতো। অন্যদিকে প্রমাণিত সত্য হলো, চাঁদা ও কমিশনসহ সহজবোধ্য কিছু কারণে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সাধারণত নেয়ও না। একই কারণে ব্যবসায়ী-মহাজনরাও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে যথেচ্ছভাবে। এবারও করতে শুরু করেছে রমযানের আগে থেকেই। একই কারণে দামও চলে যাচ্ছে মানুষের নাগালের অনেক বাইরে। সব কিছুর পেছনে রয়েছে সরকারের প্রশ্রয়। অতীতেও একই কারণে মানুষকে কষ্ট ও ভোগান্তির কবলে পড়তে হয়েছে। সাধারণ মানুষের তো বটেই, নাভিশ্বাস উঠেছে এমনকি মধ্যবিত্ত ও উচ্চ বিত্তের মানুষদেরও।
আমরা মনে করি, অসৎ ও মুনাফাখোর টাউট ব্যবসায়ী-মহাজনদের প্রশ্রয় ও সহযোগিতা দেয়ার পরিবর্তে সরকারের উচিত এখনই জরুরি ভিত্তিতে এবং কঠোরতার সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা ও চালসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের মূল্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া। আমদানি করে হলেও বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ানো দরকার। না হলে এক বেলা ভাত খাওয়ার মতো অবস্থাও থাকবে না মানুষের।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন