শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

ঘর থেকে জেল উত্তম!


মাঝে-মাঝে কিছু অদ্ভুত খবরও প্রকাশিত হয় সংবাদপত্রের পাতায়। এমন একটি খবরের শিরোনাম, ‘স্ত্রী থেকে রেহাই পেতে ব্যাংক ডাকাতি!’ এএফপি পরিবেশিত খবরটিতে বলা হয়, ৭০ বছর বয়স্ক এক বুড়ো ব্যাংক-ডাকাতি করেছেন। কারণ তিনি স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে থাকতে চান। তার মনে হয়েছে কারাগারে যাওয়াই সে ইচ্ছে পূরণের একমাত্র উপায়। আদালতের নথিপত্র অনুযায়ী আমেরিকার ক্যান্সাস অঙ্গরাজ্যের ওই ব্যক্তির নাম লরেন্স রিপল। স্ত্রী রেমে ডিওসের সঙ্গে তার বেশ বড় ধরনের ঝগড়া হয়েছিল। ‘বরং জেলখানায় যাব, তবুও বাড়ি ফিরবো না’- রেগেমেগে এই ঘোষণা দিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান রিপল। এরপর সোজা গিয়ে ঢোকেন ক্যান্সাস সিটির এক ব্যাংকে। কাউন্টারে গিয়ে টাকা-পয়সা দাবি করে বলেন, তার কাছে একটা বন্দুক আছে। নিজের সম্ভাব্য পরিণতি জানাই ছিল আনাড়ি ডাকাত রিপলের। আর তিনি চেয়েছিলেন সেটাই। তাই ৩ হাজার মার্কিন ডলার নগদ হাতে পেয়েও পালিয়ে যাননি। বরং গ্রেফতার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করলেন। পুলিশ এলে বললেন, স্ত্রীর সঙ্গে থাকা তার পক্ষে আর সম্ভবই হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত লরেন্স রিপলের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। এখন তিনি কারাগারে।
ঘটনাটি আসলেই বেশ অদ্ভুত। একজন মানুষ স্ত্রী ও ঘর-সংসার ছেড়ে কারাগারে থাকতে চাইবেন কেন? স্ত্রীর কাছ থেকে বিচ্ছেদ বা আলাদা থাকাটাও তার সমস্যার একটা সমাধান হতে পারতো। কিন্তু রিপল ওই পথে গেলেন না। কারণ একা থাকতে নাকি তার ভয় লাগে। কারাগারে তাকে একা থাকতে হবে না। কারাগারের বাড়িতে নতুন অনেক বন্ধু মিলেছে এই বৃদ্ধের। সেখানে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া এবং স্বাস্থ্যসেবার সুযোগও আছে। রিপলের ডাকাতি করে পাওয়া ৩ হাজার ডলার ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে ব্রাদার-হুড ব্যাংক এন্ড ট্রাস্টকে। কি নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে তার ঝগড়া লেগেছিল সেটা অবশ্য আদালতের নথিতে লিপিবদ্ধ হয়নি। আর তার পক্ষে কোনো উকিলও দাঁড়ায়নি।
আলোচ্য খবরটি শুধু অদ্ভুত নয়, সেখানে রয়েছে অনেক প্রশ্ন এবং বার্তাও। স্ত্রীর হাত থেকে রেহাই পেতে এই বৃদ্ধ জেলে যেতে চাইলেন কেন? স্ত্রীর সঙ্গ কি এতই খারাপ যে, তার চাইতে জেলের কয়েদীদের সঙ্গই তার কাছে উত্তম মনে হলো? জেলে তিনি এখন অনেক বন্ধু পেয়েছেন, তাদের সাথে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া এবং স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে তিনি ভালই আছেন। তাই প্রশ্ন জাগে, গৃহে কি তার বন্ধুর অভাব ছিল? অথচ দুই মানব-মানবী মিলে বিয়ের মাধ্যমে যে সংসার জীবনের যাত্রা শুরু হয়, সেখানে তো বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকতে হয়। বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকলে পরস্পর পরস্পরকে উপলব্ধি করতে পারে, সহমর্মী হতে পারে এবং ভাগ করে নিতে পারে সুখ এবং দুঃখকেও। রিপলের সংসারে কি এসব বিষয়ের অভাব ছিল? মিসেস রিপলের কোনো বক্তব্য অবশ্য আমরা পাইনি। তার বক্তব্য পেলে আমাদের তথ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ হতো। পুরো বিষয়টা উপলব্ধি করাও আমাদের জন্য সহজ হতো। কিন্তু তেমন সৌভাগ্য আমাদের হয়নি। আসলে সংসার গড়ার যেমন লক্ষ্য থাকে, তেমনি তা ভাঙ্গারও কারণ থাকে। সংসার জীবনে স্বামী বা স্ত্রী লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে সংসার তো ভাঙ্গবেই তাই সংসার জীবনে পরস্পরকে অভিযুক্ত না করে বরং পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব পালনটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়া ব্যক্তিত্বের সংঘাত, অহংবোধ, ভোগবাদ এবং স্বার্থপরতাও সংসারে ভাঙ্গন ধরায়। এসব বিষয়েও নর-নারীর সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads