রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৪

সালতামামি ২০১৪ : কেউ ভালো নেই!


ভালো নেই দক্ষিণ এশিয়া এবং বিশ্ব। ২০১৪ সালকে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় সালতামামির মতো করে বললে এ কথাই বলতে হয় যে, ভালো নেই। 
ফিলিস্তিনী অধ্যুষিত গাজায় ইসরাইল নতুন করে বিমান হামলা শুরু করেছে। ফিলিস্তিনী যোদ্ধা সংগঠন ‘হামাসের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে’ এ হামলা চালানো হচ্ছে। ইসরাইলে হামাসের একটি রকেট হামলার জবাব দিতেই পাল্টা-হামলা চালানো হচ্ছে বলে দাবি ইসরাইলের। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। আজ হামাসের একটি সাইট লক্ষ্য করে বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করে ইসরাইলী বাহিনী। গাজার খান ইউনিস এলাকার বাসিন্দারা জানান, তারা দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন। এ হামলায় হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি। গত আগস্ট মাসে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর এটা প্রথম হামলার ঘটনা। ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে এ তথ্য দেয়া হয়েছে। ইসরাইলী সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল পিটার লার্নার দাবি করেন, গতকাল ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলীয় এশকোল এলাকায় হামাসের একটি রকেট হামলার জবাবে পাল্টা-হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। ওই রকেট হামলায় কোন ইসরাইলী হতাহত হননি বা কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। গত আগস্টে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ইসরাইলী আগ্রাসনে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান। নিহতদের মধ্যে মাত্র ৭০ ইসরাইলী বাদে বাকি সবাই ফিলিস্তিনী বেসামরিক নাগরিক এবং তাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। কেন এমন শিরোনাম সে ব্যাখ্যা দেওয়া যাক। দক্ষিণ এশিয়া ভালো নেই মানে এ অঞ্চলের দেশগুলো ভালো নেই। পাকিস্তান-আফগানিস্তানের সীমান্তে কি হচ্ছে, সেটা তো রক্তাক্ত অক্ষরেই লিপিবদ্ধ হয়েছে কয়েক দিন আগে। স্কুল পর্যন্ত নিরাপদে নেই সেখানে। জঙ্গিবাদ সেখানকার প্রধান ইস্যু। ভারতেও প্রবলভাবে সাম্প্রদায়িক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সেখানে থেমে থেমে উত্তেজনা বিরাজ করছে। নেপালে সংবিধান প্রণয়নের প্রশ্নে সঙ্কট চলছে। রোডম্যাপ ঘোষিত হলেও সময়সূচি মতো সংবিধান হচ্ছে না। কারণ চীনপন্থী কমিউনিস্ট পার্টিতে শীর্ষ নেতা পুষ্প কুমার ডাহাল ওরফে প্রচন্ড এবং দ্বিতীয় নেতা ড. বাবু রাম ভট্টরায়ের মধ্যে চলছে ভয়ানক দ্বন্দ্ব। দলের পলিট বুর‌্যো একাধিক বার মিলিত হয়েছে দ্বন্দ্ব নিরসনে। অন্যদিকে, মস্কোপন্থী কমিউনিস্টরাও অন্তঃদ্বন্দ্বে জর্জরিত। নেপাল কংগ্রেসে চলছে রক্ষণশীল বনাম উদারপন্থীদের লড়াই। ফলে থেকে থেকে হিন্দু ধর্মাশ্রিত নেপালে থেমে থেমে রাজতন্ত্রের পক্ষে স্লোগান উঠছে। যদি সাংবিধানিকভাবে ডান, বাম, ধর্মীয় এবং নরম ও চরমপন্থীদের মধ্যে ঐক্য সাধন করা না যায়, তবে নেপালের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ পুনরায় সংঘাত ও সঙ্কটের দিকেই চলে যেতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ শ্রীলঙ্কা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে চরমভাবে বিভাজিত। মহেন্দ্র রানাপাক্সের বিরুদ্ধে সবাই একাট্টা। পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট কুমারী চন্দ্রিকা। শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির দুই নেতার দ্বন্দ্বে জন্ম নিয়েছে সম্মিলিতি বিরোধী দল। চীন আর ভারত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নির্বাক দর্শক নয়। দেশীয় আর আঞ্চলিক খেলা জমছে লঙ্কার নির্বাচনকে ঘিরে। ক্ষমতাসীন মহেন্দ্র কোনো অবস্থাতেই মসনদ ছাড়তে নারাজ। অন্যদিকে বিরোধীরাও একাট্টা। অতএব আসছে বছরের জানুয়ারির ৮ তারিখের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারত মহাসাগরের মুক্তোর টিপ নামে খ্যাত দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা নাজুক অবস্থার মুখোমুখি। সেখানে বিরাজ করছে চরম ভীতি আর সংঘাত-রক্তপাতের আশঙ্কা। ক্ষুদ্র রাষ্ট্র ভূটানেও শরণার্থী প্রশ্নে সঙ্কট চলছে। সেখানকার নেপালি ভাষী জনগোষ্ঠীকে সিকিম আর নেপালে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে। আরেক বড় শরণার্থী সমস্যা হলো তিব্বতীদের ক্ষেত্রে। পঞ্চাশের দশক থেকেই লক্ষ লক্ষ তিব্বতী দালাইলামাকে অনুসরণ করে লাসা ছেড়ে ভারত বা নেপালে বসবাস করছে। আমাদের সঙ্গে এমন অনেকেরই কথা ও পরিচয় হলো, যারা তিন পুরুষ ধরে রিফিউজি। দাদা, বাপ আর এখন নিজেও রিফিউজি ক্যাম্পে বড় হলেও তিব্বতীরা শিক্ষিত, ইংরেজি-জানা এবং আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য গড়ছেন। অনেকেই কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাচ্ছেন। তাদের একটাই বেদনা, পরিচিতির সঙ্কট আর নাগরিকত্বহীনতা। যেসব দেশে তারা থাকছে, সেখানে শরণার্থী হয়েই থাকছে। নাগরিকত্ব পাচ্ছে না। দক্ষিন এশিয়ার আরো দুটি বড় শরণার্থী গ্রুপ হলো বিহারি আর রোহিঙ্গাগণ। বিহারিরা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ হয়েছেন। যেমন রোহিঙ্গারাও নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। নেতৃত্বের অদূরদর্শিতার জন্য বিহারি ও রোহিঙ্গারা নিজেদেরকে মানব সম্পদে রূপান্তরিত করতে পারছে না। নিজের দেশের মতোই আশ্রয় গ্রহণকারী দেশেও তারা সম্মান অর্জন করতে পারছে না। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আপাত শান্তি ও স্থিতিশীলতা দেখা গেলেও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পথে মসৃণভাবে এগুতে পারছে না। নির্বাচনী বৈধতার সঙ্কট রয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রধান দলগুলোর মধ্যে  বিরাজ করছে তীব্র অনৈক্য ও দ্বন্দ্ব। বাংলাদেশের দায়িত্ব পালন শেষে বিদায় নেওয়ার প্রাক্কালে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনাকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৬ জানুয়ারি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের তরফে যে অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়েছিল তার কোন হেরফের হয়নি। ফলে দেশের ভেতরে ও বাইরে বাংলাদেশের রাজনীতি, নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক চেহারা সম্পর্কে যে মনোভাব রয়েছে, সেটার বিশেষ হেরফের হয় নি। বাংলাদেশকে গ্রহণযোগ্য, অংশমূলক, তাৎপর্যপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আসার তাগিদ এখনো প্রায়ই আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে উচ্চারিত হয়। অতএব দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশই সমস্যার বাইরে নেই। হয়তো সমস্যার ধরন ও প্রকৃতি ভিন্ন। কিংবা সমস্যাগুলো কোথাও প্রকাশ্য বা কোথাও সুপ্ত। তথাপি একথা বলতেই হয় যে, হিমালয় থেকে সমুদ্রব্যাপী বিস্তারিত বিশাল ভূ-ভাগ আর বিপুল মানুষের বসতি দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সামনে অপেক্ষা করছে অনেক অজানা বিপদ আর সমস্যা। কিন্তু এসব চ্যালেঞ্জ আর বিপদ মোকাবিলার জন্য সাধারণ মানুষের আগে ঐক্যবদ্ধ ও  প্রস্তুত হতে হয় নেতৃবৃন্দকে। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ ব্যক্তিগত ও দলীয় দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বৈরতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র, অস্বচ্ছতা, জবাবদিহিহীনতা ইত্যাদিতে এতটাই আক্রান্ত যে, ভবিষ্যতের বিপদ দেখার চেয়ে বর্তমান লুটপাটই তাদের কাছে প্রধান বিষয়। লোভ ও লাভে অন্ধ নেতৃত্ব ভবিষ্যৎ বিপদ উত্তরণে কতটুকু কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারবে? এটাই এখন সবার প্রশ্ন।
সরকারের দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় দেশের কৃষিখাত আজ ধ্বংসের মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, সরকার ভরা আমন মওসুমে ভারত থেকে লাখ লাখ টন শুল্কমুক্ত চাল আমদানি করছে। সরকারি দলের লোকজনের লুটপাটের জন্য এ চাল আমদানি করা হচ্ছে। অথচ দেশের কৃষকরা নিজ উদ্যোগে তাদের কষ্টার্জিত অর্থের মাধ্যমে এ বছর আমনের বাম্পার ফলন ফলিয়েছে। এ চাল কৃষকরা বিক্রি করতে না পেরে লোকসানের শিকার হচ্ছেন। আজ সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তবে দলগুলোও সমালোচনার বাইরে নেই। বাংলাদেশে দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মকা- আধুনিক ও সাংবিধানিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে দল দুটির রাজনৈতিক আচরণ এ পর্যন্ত অর্জিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য ঝুঁকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ‘শাসন পরিস্থিতি, বাংলাদেশ ২০১৩: গণতন্ত্র, দল, রাজনীতি’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনৈতিক অগ্রগতি সত্ত্বেও রাজনৈতিক বিকাশ কেন পিছিয়ে আছে, তা বের করাই এই গবেষণার উদ্দেশ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জরিপ, সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার, গুণগত ও পরিমাণগত গবেষণায় পাওয়া ফলাফলের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনে বিশ্লেষণগুলো করা হয়েছে। প্রতিবেদনে দেশে একচ্ছত্র দলতন্ত্রের বিকাশ এবং এর ফলে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনীতিতে এখন ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যদের অবস্থা রমরমা। ব্যবসায়ীদের আনা হচ্ছে, কারণ তারা দলের জন্য অর্থ ব্যয় করতে পারেন।
রাজনৈতিক অগ্রগতির বাধা একচ্ছত্র দলতন্ত্র : গবেষণায় দেশের রাজনৈতিক পরস্থিতির একটি উদ্বেগজনক বিষয় উঠে এসেছে, তা হলো বহুদলীয় গণতন্ত্র থেকে একচ্ছত্র দলতন্ত্রের বিকাশ। রাষ্ট্রগঠন, গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতা ও আইনের শাসন রাজনৈতিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় এই তিন সূচকের নাজুক অবস্থা থেকেই দলতন্ত্রের বিষয়টি পরিষ্কার। সরকার ও বেসরকারি সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের ওপর একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তারের প্রবণতা রাজনৈতিক দলগুলোতে প্রকট। বড় দলগুলো সফলভাবে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিজেদের দখলে নিয়েছে এবং এর মাধ্যমে তারা ওই সব প্রতিষ্ঠানের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের পক্ষে কাজ করিয়ে নিতে পারছে। সুশীল সমাজ, সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন, পুলিশ বাহিনী এবং জেলা পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের মতো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ওপর পড়েছে দলতন্ত্রের প্রভাব।
সুশীল সমাজ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দলীয়করণ এবং স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিনিধিত্ব দুর্বল হয়ে পড়ায় রাজনীতিতে বহুমতের পথ রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এতে করে দলগুলোর কর্তৃত্ববাদী প্রবণতাও বেড়েছে। এ পরস্থিতির প্রভাব পড়েছে রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদলের ওপরও। এই একচ্ছত্র দলতন্ত্রের ভয়ানক প্রভাব পড়েছে দেশের সুশীল সমাজের ওপর। একসময়ের সেই সরব সুশীল সমাজ এখন মিইয়ে গেছে। দেশের আথর্ সামাজিক উন্নয়নে যাদের ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, তারা এখন অকেজো, বিশেষ করে গত কয়েক বছরের চিত্র এটাই।
রাজনৈতিক অগ্রগতিতে বাধা দলীয় কর্মকান্ড : প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে গণতান্ত্রিক আদর্শ এবং তার চর্চার মধ্যে বিস্তর ফারাক। এর থেকে বোঝা যায়, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতি তাদের অঙ্গীকার খুবই দুর্বল। আদর্শের ক্ষেত্রে দলের ভেতরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি জোরদার করতে পারেনি। আর চর্চার ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে দলের মধ্যে প্রতিযোগিতার বিষয়টি কেন্দ্র থেকে ভালোভাবে নেয়া হয় না।
বেড়েছে হানাহানি : ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দেশে রাজনৈতিক সংঘাত ৪ শতাংশ হারে বেড়েছে। হানাহানিতে সব সময় এগিয়ে আছে ক্ষমতাসীন দল, সেটা প্রধান দুই দলের যে যখন ক্ষমতায় থাকে। আর এ ধরনের হানাহানির বেশির ভাগ ঘটে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে। রাজনৈতিক এই সংঘাতের কারণ আদর্শগত সমন্বয়ের অভাব। এসব হানাহানি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সুপারিশে বলা হয়, দলের শীর্ষ নেতাদের এমন পরিবেশ  তৈরি করতে হবে, যাতে করে দলের মধ্যকার সব মতের নেতা-কর্মীরা তাদের পাশে আসতে পারেন। মুক্তচিন্তা ও বিতর্কের সুযোগ পান। একই সঙ্গে দলের মধ্যে যারা মৌলিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলো লঙ্ঘন করবেন, তাদের জবাবাদিহি ও শাস্তির ব্যবস্থাও করতে হবে।
পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ : বর্তমানে রাজনীতিতে ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যদের অবস্থা রমরমা। দলীয় সদস্যদের পরিচয় পর্যালোচনা, জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব, বাজেট বক্তৃতায় অংশগ্রহণ, সংসদীয় কমিটিতে প্রতিনিধিত্ব ইত্যাদি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনীতিকের ব্যক্তিগত  বৈশিষ্ট্য এখন আর সার্বিক রাজনৈতিক বিকাশে কাজে লাগছে না। এমনিক দলের কোন নেতা সংসদে সরব হবেন, তাও ঠিক করে দিচ্ছে দলগুলো। এমন প্রমাণও পাওয়া গেছে, সেসব ব্যবসায়ী ও নেতারাই দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হচ্ছেন, সংসদে যাদের উপস্থিতি কম।
স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে নয়, বরং রাজনৈতিক দলগুলো সেসব লোকজনকেই দলে ভেড়াচ্ছে উদ্দেশ্য সাধনে, যাদের কাজে লাগানো যাবে। পরামর্শে বলা হয়, দলীয় নেতৃত্বের জন্য রাজনীতিবিদের সার্বিক জীবনচরিত পর্যালোচনা করা জরুরি। তাহলে ‘নেতা কে হবে’ আর তাদের ‘আচরণ হবে কেমন’ এসব বিষয়ে বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি দাঁড় করানো যাবে। আর কেবল তখনই দলীয় নেতা এবং তাদের চরিত্রের মধ্যে একটি মেলবন্ধন খুঁজে বের করা যাবে।
নারীর অংশগ্রহণ হতাশাজনক : প্রধান দুই দলে নেতৃত্ব পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ খুবই হতাশাজনক। প্রতিবেদনে বলা হয়, নারীরা শুধু ব্যবহৃত হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী হিসেবে। আর দলের নীতিনির্ধারণী শীর্ষ পর্যায়ে কর্তৃত্ব করছেন পুরুষেরা। সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিস্থিতির কারণে যে এমনটা ঘটছে, তা নয়। বরং রাজনৈতিক দলগুলো ইচ্ছাকৃতভাবেই তা করছে।
অর্থায়নে স্বচ্ছতা প্রয়োজন : প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দলগুলো আগের চেয়ে এখন আরও বেশি হারে ব্যবসায়ীদের নিয়ে আসছে। কারণ, দলের প্রত্যাশা থাকে, ব্যবসায়ীরা দলের জন্য অর্থের সংস্থান করবেন।
প্রধান দলগুলো দাবি করে, দলের সদস্য ফি-ই জেলা পর্যায়ে অর্থসংস্থানের প্রধান পথ। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দলগুলো তাদের ব্যয় নির্বাহের জন্য মূলত বেসরকারি খাতের অনুদানের ওপরই নিভর্রশীল।
প্রয়োজন জাতীয় সংলাপ : সার্বিক পরিস্থিতি আলোচনার পর প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়, দেশের গণতন্ত্র বর্তমানে যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তা থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজন জাতীয় সংলাপ। তা না হলে গণতান্ত্রিক অর্জন পশ্চাদমুখী হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
যদি মোদ্দা কথায় ২০১৪ সালের সালতামামি করি, তাহলে বলতেই হবে, ‘ভালো নেই’।
কনক জ্যোতি

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads