মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৪

চবিতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের গুলীতে আরো একটি হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে। গত রোববার শাহ আমানত হলের সামনে নিষ্ঠুর এই হত্যাকান্ডের শিকারও হয়েছে ছাত্রলীগেরই কর্মী এবং সংস্কৃত বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র তাপস সরকার। তার বুকে একাধিক বুলেট বিদ্ধ হয়েছিল। বুলেটগুলো বিদেশী নাইন এমএম পিস্তলের বলে পুলিশ জানিয়েছে। যার গুলীতে তাপস মারা গেছে। সেই ঘাতক আশরাফুজ্জামান পাশা একজন পরিচিত আওয়ামী ক্যাডার। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান শত কোটি টাকার ঠিকাদারী ব্যবসা, চাঁদাবাজি এবং হল দখল ও নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয়ে ছাত্রলীগ আগে থেকেই দ্বিধাবিভক্ত হয়ে রয়েছে। দুটি প্রধান গ্রুপের একটি চলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর আনোয়ারুল আজিমের কথায়, অন্য গ্রুপটির নেতৃত্বে রয়েছেন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবং আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী। খুবই কৌতুহলোদ্দীপক তথ্য হলো, বিবদমান গ্রুপ দুটির মধ্যে অতি সম্প্রতি নাকি এই মর্মে সমঝোতা হয়েছিল যে, তাদের কেউ অন্য গ্রুপের কাউকে আক্রমণ করবে না। সে সমঝোতার ভিত্তিতেই উভয় গ্রুপের নেতা-কর্মীরা সেদিন বুদ্ধিজীবী দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল। তারও আগে তারা ফুল হাতে পাশাপাশি হেঁটেছেও। কিন্তু তারপরই হঠাৎ শুরু হয়েছে সংঘর্ষ। নিজেদের মধ্যে হলেও প্রথম থেকেই গুলী ছুঁড়েছে উভয় পক্ষ। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। ওদিকে তাপস সরকারকে নাকি রীতিমতো টার্গেট করে গুলী করেছে আওয়ামী ক্যাডার পাশা। নিহত তাপস মহিউদ্দিন চৌধুরী নিয়ন্ত্রিত সিএফসি গ্রুপের সদস্য ছিল। অন্যদিকে ক্যাডার পাশা শুধু ভিসি নিয়ন্ত্রিত গ্রুপের সদস্য নয়, ব্যক্তিগতভাবেও ভিসির খুব কাছের লোক হিসেবে পরিচিত। ভিসির সঙ্গে ওঠানো তার ছবিও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। এ সংক্রান্ত সব খবরেও ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে বলেই জানা গেছে। 
আমরা এ হত্যাকা-ের তীব্র নিন্দা জানাই এবং মনে করি, প্রথম বর্ষের একজন ছাত্রের এমন করুণ মৃত্যু কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। প্রতিবাদ ও উদ্বেগের এটাই একমাত্র কারণ নয়। প্রধান কারণ হলো, সারাদেশের শিক্ষাঙ্গণগুলোতে তো বটেই বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বহুদিন ধরেই ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকা- চলছে। চাঁদাবাজি, ভর্তি বাণিজ্য এবং হল দখল ও সিট নিয়ে ব্যবসা থেকে শুরু করে এমন কোনো বিষয় নেই, যেখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মৗ ও ক্যাডাররা জড়িত থাকে না। রাজনৈতিক অবস্থান থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধেও ছাত্রলীগ সব সময় লেগে থাকে। সুযোগ ও উপলক্ষ পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। সে কারণে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের সঙ্গে মাঝে-মধ্যেই ছাত্রলীগের সংঘাত বাঁধে। প্রতিটি ক্ষেত্রে দায়ী থাকে ছাত্রলীগ। কিন্তু ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ থাকায় সব দোষ চাপানো হয় প্রতিপক্ষের ওপর। জোর প্রচারণা চালিয়ে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে জনগণকে উস্কিয়ে দেয়া হয়। এভাবেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগকে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে। এই প্রশ্রয় যে হিতে বিপরীত হয়ে উঠেছে এবং সন্ত্রাসীরা যে আসলেও কোনো দলের হতে পারে না- একথারই প্রমাণ মিলেছে গত রোববারের হত্যাকান্ডে। এবার ছাত্রলীগের এক ক্যাডারের গুলীতে ছাত্রলীগেরই একজন তরুণ কর্মী মারা গেছে। আমরা মনে করি, এভাবে হত্যাকা-কে প্রশ্রয় দেয়ার পরিণতি ধ্বংসাত্মক হতে বাধ্য। কথাটা ক্ষমতাসীনদেরও না জানা থাকার কথা নয়। কিন্তু সব জেনে-বুঝেও তারা দলবাজি করছেন বলেই প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও খুনের ঘটনা ঘটে চলেছে। অন্য একটি কারণও উল্লেখ করা দরকার। খুনসহ অপরাধ দমনের জন্য দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া দায়িত্ব হলেও ক্ষমতাসীনরা মূলত রাজনৈতিক পরিচিতির ভিত্তিতে নিজেদের দলীয় লোকজনকে রেহাই দিয়ে এসেছেন। এখনো দিচ্ছেন। ক্ষমতাসীন দলের সদস্য হলে সাত খুন করেও ছাড় পেয়ে যাচ্ছে ঘাতক-সন্ত্রাসীরা। সেজন্যই দেশের অন্যসব এলাকার মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটছে। এতে বেশি বিপন্ন কিন্তু ক্ষমতাসীনরাই হচ্ছেন। অপরাধ তো বাড়ছেই, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতিরও মারাত্মক অবনতি ঘটছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হত্যাকান্ড তারই সর্বশেষ উদাহরণ। হত্যাসহ অপরাধ কমিয়ে আনতে হলে সরকারকে অবশ্যই সংকীর্ণ দলবাজির নীতি-মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে। তাহলেই বাঁচানো যাবে তাপস সরকারের মতো তরুণ ছাত্রদের। আমরা মনে করি, খুনী যেহেতু চিহ্নিত হয়েছে সেহেতু অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সরকারের কর্তব্য। একই সঙ্গে সেসব বিশিষ্টজনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে, যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানা নামের গ্রুপ প্রতিষ্ঠা ও নিয়ন্ত্রণ করেন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads