মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৪

সংসদে প্রধানমন্ত্রীর সমাপনী ভাষণ


বিতর্কিত এবং দেশে-বিদেশে প্রত্যাখ্যাত দশম জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে জাতিকে আবারও নিরাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৩০ নবেম্বর সন্ধ্যায় দেয়া এই ভাষণে নিজের নেতৃত্বাধীন সরকারের নানা অর্জন ও সাফল্য সম্পর্কে তো বলেছেনই, সবচেয়ে বেশি বলেছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ ২০ দলীয় জোটের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়াকে তুলাধুনা করেছেন অত্যন্ত কঠোর ও ব্যঙ্গাত্মক ভাষায়। বলেছেন, বিএনপির নেত্রী সংসদে না থাকায় একদিক থেকে ভালো হয়েছে। ঠিক কোন দিক থেকে ভালো হয়েছে তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তারা অর্থাৎ বেগম জিয়া এবং বিএনপি-জামায়াতের এমপিরা নাকি শুধু খিস্তিখেউর করতেন। এখন তারা না থাকায় সেসব আর শুনতে হয় না। সংসদে এখন নাকি সেই পরিবেশ আর নেই এবং সংসদ নাকি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে! প্রধানমন্ত্রী অভিযোগের সুরে বলেছেন, বেগম জিয়া নাকি বিশেষ কোনো শক্তির মদদে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করেছিলেন এবং তার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে থাইল্যান্ডের বর্তমান অবস্থার দিকে ঠেলে দেয়া। থাইল্যান্ডে যে নির্বাচন হতে পারেনি এবং বিশৃংখল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দেশটিতে যে সামরিক শাসন জারি হয়েছে সে কথাটাও বিশেষ ইঙ্গিত সহকারেই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন  প্রধানমন্ত্রী।
আরো অনেক কথাও তিনি বলেছেন, কিন্তু বেশি গুরুত্ব অর্জন করেছে তার উদ্দেশ্য এবং সর্বশেষ মনোভাব। বলা বাহুল্য, সংসদে দেয়া এই ভাষণের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে এমন সদিচ্ছার প্রমাণ পাওয়া যায়নি যার সূত্র ধরে আশা করা যাবে যে, অদূর ভবিষ্যতে চলমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হতে পারে। বাস্তবে সংকটের পেছনে বিদ্যমান প্রধান কারণটিরই ধারে-কাছে যাননি প্রধানমন্ত্রী। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে দাবিতে বিরোধী দল আন্দোলন করছে তা মেনে নেয়ারও কোনো আভাস দেননি প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে কিছু বলার পরিবর্তে সরাসরি আক্রমণ ও সমালোচনা করার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরং বুঝিয়ে দিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে পা বাড়ানোর কোনো ইচ্ছাই তাদের নেই। উল্লেখ্য, আন্দোলনের এক পর্যায়ে সরকারের নামের ব্যাপারে বেগম খালেদা জিয়া ছাড় দিয়ে রেখেছেন। বলেছেন, যে কোনো নামেই গঠন করা হোক না কেন, নির্বাচনকালীন সরকারকে নির্দলীয় হতে হবে এবং শেখ হাসিনা সে সরকার প্রধানের পদে থাকতে পারবেন না। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে শুধু পাশই কাটিয়ে যাননি, বেগম খালেদা জিয়াকেও এমন কঠোর ভাষাতেই আক্রমণ করেছেন যা শুনে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বুঝতে অসুবিধা হয় না। এরই পাশাপাশি সরকার বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের ওপর দেশজুড়ে চালাচ্ছে হামলা ও দমন-নির্যাতন। গ্রেফতারও করা হচ্ছে ঢালাওভাবে। এ ধরনের কর্মকা- অন্তত সমঝোতার ব্যাপারে সদিচ্ছার ইঙ্গিত দেয় না।
সব মিলিয়েই ধরে নেয়া যায়, সহজে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার কোনো ইচ্ছা নেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর। বর্তমান বিতর্কিত সংসদ বাতিল এবং সব দলের অংশগ্রহণে নতুন একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন বলেই বিএনপি-জামায়াতসহ প্রধান কোনো রাজনৈতিক দলই প্রধানমন্ত্রীর ভাষণকে স্বাগত জানায়নি। হতে পারে, যথেষ্ট ভেবেচিন্তেই ক্ষমতা স্থায়ী করার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চাচ্ছেন তিনি। আমরা মনে করি, গণআন্দোলনের অশুভ পরিণতি এড়াতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর উচিত অবিলম্বে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করা। প্রধানমন্ত্রীকে একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের প্রশ্নেও ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে। দেশে শান্তি, স্বস্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্বই সবচেয়ে বেশি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads