শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০১৭

আদম টিজিং বন্ধ না হলে ইভটিজিং বন্ধ হবে না

আমরা জানি প্রথম মানব হচ্ছেন হযরত আদম এবং প্রথম মানবী  হাওয়া (আ.)। এ নাম আল কুআনুল কারীম ও হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে। তবে খ্রিস্টান ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থ বাইবেল তথা ইনজিলে হাওয়া (আ.)কে ইভ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইভ বলতে সমগ্র নারী জাতিকেই বুঝানো হচ্ছে। এর বিপরীতে আমরা আদম বলতে সমগ্র পুরুষ জাতিকে বুঝাতে পারি।
টিজ শব্দের অর্থ হল বিরক্ত করা, জ্বালাতন করা, উত্ত্যক্ত করা ইত্যাদি। পরিভাষায় পুরুষ কর্তৃক নারীকে অশালীন কথাবার্তা বলা, প্রেমপত্র, মোবাইল ফোনে শ্রুতিকটূ আলাপ, জনতার ভিড়ে ইচ্ছাকৃত ধাক্কাধাক্কি করা, স্পর্শ করা, চোখের ভাষায় অশুভ ইঙ্গিত করা, তাকে বশে আনার জন্য ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা, অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করা ইত্যাদি যে কোন ধরনের নারীর কাছে আপত্তিকর কথা-বার্তা, অঙ্গ-ভঙ্গি, চাহনি, ইশারা-ইঙ্গিত ইভটিজিং হিসেবে গণ্য। এটি এক ধরনের যৌন আগ্রাসন।
বর্তমানের সমাজে ইভটিজিং মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কন্যা সন্তানের মাতা-পিতা অশান্তিতে ভোগছে। স্কুেল পাঠিয়ে ফিরে না  আসা পর্যন্ত তাদেরকে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। না জানি কোন খারাপ খবর আসে কি না। তার কারণ পুরুষ শাসিত সমাজে সব দোষ নারীর। ছেলে-মেয়ের মধ্যে কিছু ঘটলে মেয়েরা অচ্ছুত হয়ে যায়। তাদেরকে কেউ বিয়ে করতে চায় না। আর ছেলেরা হয় তুলসি পাতায় ধোয়া। এক অসৎ চরিত্রের ছেলেও মেয়ের চরিত্র খুঁজে, কিন্তু সে তার নিজের চরিত্রের দিকে তাকায় না। কন্যাপক্ষও ছেলের চরিত্রের বিষয়ে খুব বেশি গুরুত্ব প্রদান করে না। বরং সে দেখে ছেলে বড় চাকরি করে কি না, তারা বড় লোক কি না ইত্যাদি।
সভ্যতা বিবর্জিত আরব সমাজে নারীরা কতটা অসহায় ও নিরাশ্রয় ছিল তা সহজেই অনুমেয়। পুত্র সন্তান তাদের জন্য ছিল গর্বের বিষয়। পক্ষান্তরে কন্যা সন্তান ছিল তাদের জন্য লজ্জাজনক, লাঞ্ছনাকর ও অমর্যাদাকর। আল কুরআনুল কারীমের সূরাতুন নাহলের ৫৭-৫৮ নম্বর আয়াতে সে অবস্থার একটি চিত্র ফুটে উঠেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন - “ওয়া ইযা বুশশিরা আহাদুহুম বিল উনসা জল্লা ওয়াজহুহু মুসওয়াদ্দান ওয়াহুয়া কাযীম ইয়াতাওয়ারা মিনাল কাওমি মিন সু-ই-মা বুশশিরা বিহি আ ইউমসিকুহু আলা হূনিন আম ইয়াদুসসুহু ফিত তুরাবি আলা মা সা-আ মা ইয়াহকুমুন” অর্থাৎ তাদের কাউকে যখন কন্যা সন্তানের জন্মগ্রহণের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তার চেহারা কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করে এবং মনোকষ্টে তার হৃদয় মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে। লোকচক্ষু থেকে সে নিজেকে আড়াল করে চলতে থাকে। কারণ এ সুসংবাদ লাভের পর কি করে সে মানুষকে মুখ দেখাবে। সে তখন ভাবতে থাকে, লাঞ্ছনা বহন করে তাকে জীবিত রেখে দিবে, না মাটির নিচে পুঁতে ফেলবে? তাদের ফয়সালা কতই না নিকৃষ্ট! বর্তমান সমাজে কন্যা সন্তান জন্ম নিলে আইয়ামে জাহিলিয়্যাতের ন্যায় পুুুরুষের মুখ কালো হয় না বটে কিন্তু বয়প্রাপ্ত হলেই তাদেরকে বড় ভাবনায় পড়তে হয় এই চিন্তায় যে, কখন কি যেন ঘটে যায়। তারা কোন একটি ছেলের হাতে তুলে দিতে পারলেই হাফ ছেড়ে বাঁচে। ইভটিজিং এ ভয়ে স্কুল-কলেজগামী মেয়েরা রাস্তাঘাটে নিরাপত্তার অভাববোধ করে। মেয়েদের লেখা-পড়া বন্ধ হয়ে যায়। ক্ষেত্রবিশেষে মেয়েরা আত্মহত্যাও করে।
বর্তমানে ইভটিজিং প্রকট আকার ধারণ করার কারণ হল আমাদের যুব সমাজের নৈতিক অধপতন। নারী পুরুষের একে অপরের প্রতি আকর্ষণ সহজাত প্রবৃত্তি তথা এটি সৃষ্টিগত স্বভাব। এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বিবেক ও নৈতিকতা দিয়ে। একটি শিশু এই পৃথিবীতে চক্ষু মেলেই প্রথমত তার পরিবার থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করতে থাকে। যত বড় হয় ততই তার শিক্ষার ক্ষেত্র বড় হতে থাকে। পরিবার ছাড়িয়ে আত্মীয় স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি, স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকমন্ডলী, সমাজ ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ইত্যাদি থেকে সে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং সে প্রভাবিত হয়। এ সমস্ত পরিবেশের সবকিছুই নৈতিক চরিত্র বিধ্বংসী উপাদানে ভরপুর। যে দিকেই সে তাকাবে সে দেখতে পাবে যৌন উম্মাদনা সৃষ্টিকারী উপকরণ, যা আদমকে (পুরুষকে) সদা প্ররোচিত করছে।
আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গন খুবই কলুষিত। চলচিত্র বলি, আর নাটকই বলি সেগুলোর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় যাই হোক না কেন, নায়ক-নায়িকার প্রেম থাকতেই হবে। একজন নায়ক কি করে একজন নায়িকার মন ভুলাবে, কি করে তাকে খুশী করবে, কি করে তাকে বশে আনবে, এ জন্য যত ধরনের উন্নত অঙ্গভঙ্গি করতে হয়, প্রেম বিষয়ক যত উন্নত ভাষা ব্যবহার করতে হয়, তা সবই করে থাকে। এসব দেখে একজন যুবক আদম এগুলো রপ্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তারপর চলচিত্র ও নাটক থেকে লব্ধ জ্ঞান কাজে লাগাতে চেষ্টা করে। সেও একজন মেয়ের নিকট ঐ ধরনের অভিনয়, কথা-বার্তা, অঙ্গ-ভঙ্গি শুরু করে । এটিই ইভটিজিং হিসেবে পরিগণিত হয়।
চলচিত্রে যখন নায়ক নায়িকারা একে অপরে জড়িয়ে ধরে প্রেম নিবেদন করে, যখন একে অপরে চুমু খায়, যখন একে অপরের উপর গড়া-গড়ি করে, যখন স্পর্শকাতর কয়েক ইঞ্চি জায়গায় মাত্র কয়েক টুকরা কাপড় পরিহিত অবস্থায় অশ্লীল ড্যান্স আরম্ভ করে, বিশেষত যখন চলচিত্রে ধর্ষণের চিত্র প্রদর্শিত হয় তখন একজন যুবক আদমের মনোজগতে কি ঘটে? তখন একজন যুবক আদমের মনে কিসের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে?  সংস্কৃতির অন্যতম একটি অর্থ হল উৎকর্ষ সাধন। তখন একজন যুবক আদমের কোন  জিনিসের উৎকর্ষ সাধন হয়? নিশ্চয়ই তখন একজন  যুবক আদমের যৌন উম্মাদনার উৎকর্ষ সাধিত হয়, যৌন পাগলামীর উৎকর্ষ সাধিত হয়, কামনা-বাসনার আগুন জ্বলে উঠে। এ কথা কি অস্বীকার করা যাবে? অনেকে বলেন - সিনেমায় অনেক শিক্ষণীয় বিষয় আছে। এটা আমিও অস্বীকার করি না। কারণ সিনেমায় সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক বিষয় উপজীব্য হয়ে ফুটে উঠে। শুধুমাত্র রুচিশীর পরিবেশ বহাল থাকলে সেগুলো অবশ্যই সকলের উপকারে আসত। এমন রুচিশীল পরিবেশ বহাল থাকা উচিত ছিল যেখানে পিতা-পুত্র-কন্যা একই সাথে বসে উপভোগ করতে পারে। কিন্তু যখন অশ্লীল কার্যকলাপ আরম্ভ হয় তখন পিতা-পুত্র-কন্যার মধ্যে কে বসে থাকবে আর কে লজ্জায় মুখে রুমাল দিয়ে উঠে পালাবে? টিনেজ বয়সের যুবক যুবতীরা কি সামাজিক জ্ঞান অর্জনের জন্য চলচিত্র দেখে, নাকি অশ্লীলতা দেখার জন্য উদগ্রীব থাকে এবং সেগুলো দেখে নাকি নায়ক নায়িকা সাজতে চায়? সাম্প্রতিক কালের বস- ২ সিনেমায় নুসরাত ফারিয়ার ড্যান্স যে আদমের দেখার সৌভাগ্য হবে তার মনের যে কি অবস্থা হবে তা সহজেই অনুমেয়। কি চমৎকার! গানের প্রথম শব্দও আল্লাহ এবং বস-২ সিনেমার বাংলাদেশ অংশের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রধানের নামের শেষাংশও আল্লাহ। ৯০ ভাগ মুসলমানের এ দেশে এ ধরনের নাচ প্রদর্শিত হলে ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে আইন করা এবং আদমদেরকে নৈতিক শিক্ষা দেয়া তামাসা ছাড়া আর কিছুই নয়। 
 বাল্য বিবাহ নিশ্চয়ই ভাল কাজ নয়। কিন্তু এই সমস্ত চলচিত্র ও নাটক দেখে কি যুবক-যুবতীরা বাল্য বিবাহের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে না বা ইভটিজিং এ জড়িয়ে পড়ছে না? এই সমস্ত চলচিত্র চালু থাকলে বাল্য বিবাহ নিষিদ্ধ নয় বরং বাল্য বিবাহ ফরজ করা দরকার এবং লেখা-পড়ার কোর্স এমনভাবে ডিজাই করা দরকার যাতে করে একজন যুবক-যুবতী ১৫/১৬ বছরে পদার্পন করেই সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করতে পারে এবং চাকরি পেয়ে যায়। ফলে সে বিয়ে করে ঘরসংসার করতে পারে। তাহলে ইভটিজিং বন্ধ সম্ভব।
বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে সচিত্র খবর দেখার জন্য টিভির কোন বিকল্প নেই। কিন্তু সে খবর দেখতে গিয়েও স্বস্তি নেই। বিজ্ঞাপন আর বিজ্ঞাপন। খবরের ফাকে ফাকে খবর নয়, মনে হয় যেন বিজ্ঞাপনের ফাকে ফাকে খবর। সে বিজ্ঞাপনগুলোও অশ্লীলতায় ভরপুর। একজন সুন্দরী রমণীকে পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যম হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এক কোম্পানীর সুরেষ খাঁটি সরিষার তেল যে খুব ভাল, তা নাকি একজন সুন্দরী নারীর উথাল-পাথাল ড্যান্স ছাড়া বুঝা যাবে না। তার তেলের ভাল গুণ বুঝাবার আর কোন ভাষা নেই বা অন্য কোন প্রক্রিয়া নেই। লাক্স সাবানের কি গুণ, তা একজন রমনী শরীর অনাবৃত করে শরীরে না মাখলে এবং মাখার শেষে একজন পুরুষ তার শরীরে শরীর ভিড়িয়ে জড়িয়ে না ধরলে এবং তার শরীর থেকে ঘ্রাণ না নিলে নাকি বুঝা যাবে না। হায়রে নারী জাতি! তারাকে আজ পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে পরিণত করা হয়েছে, তারাকে আজ ভোগের বস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। এটা কি নারীর অধিকার? এটা কি নারীর মর্যাদা? এ সমস্ত চিত্র দেকে কি একজন যুবক আদম ইভটিজিং এর দিকে ধাবিত হচ্ছে না?
আমরা যদি মনে করি যে, টিভিতে অশ্লীলতা প্রদর্শিত হচ্ছে কাজেই পেপার-পত্রিকা পড়ব। সেখানেও কি আমি নিরাপদ? হায়রে সভ্য সমাজ। পেপারের বিরাট একটি অংশ জুড়ে নায়ক-নায়িকাদের ছবি ও বন্দনা। নায়ক-নায়িকাদের কে কার সাথে প্রেম করছে, কিভাবে প্রেম করছে, কোথায় গিয়ে প্রেম করছে ইত্যাকার বিষয়ে খুব ছড়াছড়ি। অনেক সময় মনে হয় এগুলো কি খবরের পেপার নাকি প্রেমের পেপার তা বুঝা মুশকিল। অনলাই পত্রিকার তো অবস্থা আরো খারাপ। আমি না চাইতেই অনেক কিছু এসে হাজির। একটি প্রবন্ধ পড়ার জন্য বের করলাম। দেখা গেল প্রবন্ধটির চতুর্দিকে সুন্দরী রমনীদের অশ্লীল ছবি শোভা পাচ্ছে। এ সমস্ত পেপার পড়ে আমাদের আদমেরা (যুবক ভাইয়েরা) কি প্রেমের দিকে ধাবিত হবে না? একজন ছেলে একজন মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দিলেতো তা ইভটিজিং।
গ্রামে-গঞ্জে সর্বত্রই যাত্রাপালা বিস্তার লাভ করেছে। যাত্রাপালায় যে কাহিনীটি মঞ্চস্থ হবে তাতে অবশ্যই অনেক শিক্ষণীয় বিষয় থাকতে পারে। কিন্তু যাত্রার মূল কাহিনী অভিনয়ের আগেই যুবকদেরকে পাগল করা ড্যান্স প্রদর্শিত হয়। শুধু তাই নয়, বর্তমানের ভ্যারাইটি সো এর নামে অশ্লীলতার এক নতুন মাত্রা সংযোজিত হয়েছে। এগুলো কি আদমকে ইভটিজিং করতে উৎসাহিত করছে না?
উপন্যাস মানেই প্রেমের কাহিনী। সেগুলো পড়ে যুবক-যুবতীরা উপন্যাসের প্রধান চরিত্রে যারা ছিল তাদের মত আচরণ করার চেষ্টা করে, ইহাই ইভটিজিং এ পরিণত হয়। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, এমনকি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষকরাও অনৈতিক আচরণের জড়িয়ে পড়ছে।
দেশের বিভিন্ন পার্ক স্থাপন করা হয়েছে বিনোদনের জন্য। কিন্তু বর্তমানের কাদের বিনোদন হয় সেখানে? সেখানে যুবক-যবতীদের প্রেম নিবেদন হয় ও যৌন বিনোদন হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ছাত্র-ছাত্রীরা কিভাবে সময় কাটায়? তাদের নির্লজ্জতা আইয়ামে জাহিলিয়্যাতকে ছাড়িয়ে গেছে। এগুলো কি ইভটিজিংকে উৎসাহিত করে না? ফেসবুক নাকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম! কিন্তু বর্তমানে দেখি ফেসবুক অশ্লীলতা ও বেহায়পনার এক কৃষ্ণ সাগর। ফেসবুকের অশ্লীলতা দেখে কি একজন অবিবাহিত আদমের মাথা ঠিক থাকতে পারে? এগুলোই কি ইভটিজিং এর মূল কারণ নয়?
বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুুক্তির যুগ। তথ্য প্রযুুক্তি উন্নয়নের ফলে গোটা বিশ্ব আজ গ্লোবাল ভিলেজ তথা বৈশ্বিক গ্রামে পরিণত হয়েছে। এর সুবাদে সমগ্র বিশ্বের ভাল খবর যেমন মুহূর্তের মধ্যে আমাদের কাছে এসে হাজির হচ্ছে তেমনি, খারাপ খবরও এসে হাজির হচ্ছে। যুবসমাজের নৈতিক চরিত্রকে ধ্বংসকারী হিসেবে সবচেয়ে যেটি বেশি সর্বগ্রাসী তা হল পর্নোগ্রাফি। অমুসলিমরা বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্ব পর্নোগ্রাফিকে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে। ব্যাভিচারের চিত্রসমূহ সহলভ্য করে দেয়া হয়েছে। মোবাইলে ইচ্ছা করলেই একজন যুবক সেগুলো দেখতে পায়। ব্যাভিচারের চিত্র দেখে একজন অবিবাহিত আদম কি করে নিজেকে সংবরণ করবে? সে তো ব্যাভিচারের দিকে ধাবিত হতে বাধ্য। এটি হচ্ছে ব্যাভিচারের প্রথম ধাপ। সে কারণেই আজকাল চলন্ত ট্রেনে ধর্ষণ, চলন্ত বাসে ধর্ষণ ইত্যাকার বহুঘটনা বিস্তার লাভ করেছে। অতীব দুঃখের বিষয় হল একটি মুসলিম প্রধান দেশে কেন পর্নোগ্রাফি অবাধে দেখার সুযোগ থাকবে? শুধু কি তাই কেই যদি ভাল থাকতে চায় তার সে সুযোগও নেই। অনলাইনে একটি ভাল জিনিস খুজতে গিয়ে এমনিতেই খারাপ জিনিস বেরিয়ে চলে আসে। শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় পাঠ্যপুস্তকে নৈতিক শিক্ষা অন্তর্র্ভুক্ত করেছেন। সে জন্য তাঁকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। দেশে ইভটিজিং বিরোধী আইন করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ইভটিজারদের শাস্তি ব্যবস্থা করা হচ্ছে এটিও খুব ভাল খবর। কিন্তু সাথে সাথে পর্নোগ্রাফিকে চালু রাখা হয়েছে, এটি অতীব দুঃখের বিষয়। উক্ত উদ্যোগগুলো নেয়ার সাথে সাথে পর্নোগ্রাফি বন্ধ করা উচিত ছিল। পর্নোগ্রাফি চালু রেখে, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অশ্লীলতা বহাল রেখে ইভটিজিং বন্ধ করা সম্ভব নয়। এটি এমন যে, একজন ব্যক্তি একটি ক্ষুধার্ত ছাগলের সামনে এক হাতে তাজা কষকষে শামার ঘাস ধরে আছে, আর অপর হতে লাঠি নিয়ে উঁচু করে ধরে আছে যে, সে খেলেই তাকে প্রহার করবে। আমাদের দেশের অবস্থা এইরূপ।
আমরা বিনোদনের জন্য বিভিন্ন খেলাধুলা দেখে থাকি। বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হল ক্রিকেট। এই খেলা দেখতে গিয়েও আমরা ফাকে ফাকে অশ্লীল নাচ দেখতে পাই। বিশেষত আন্তর্জাতিক মানের কোন খেলা উদ্বোধনের শুরুতে যে ধরনের অশ্লীলতা প্রদর্শিত হয় তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এগুলো দেখে একজন যুবক আদমের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ফলে সে ইভটিজিং এর দিকে ঝুকে যায়।
সুতরাং ইভটিজিং বন্ধ করতে হলে প্রথমে আদম টিজিং এর সমস্ত পথ রুদ্ধ করতে হবে। পর্নোগ্রাফিকে পুরাপুরিভাবে বন্ধ করতে হবে এবং পরিমার্জিত, পরিশীলিত ও সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা করতে হবে। নচেৎ আইন করে বা আদমদেরকে নৈতিক শিক্ষা প্রদান করে ইভটিজিং বন্ধ করা সম্ভব হবে না। পরিশেষে বলতে চাই আদম টিজিং বন্ধ না হলে ইভটিজিং বন্ধ হবে না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads