বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই, ২০১৬

গুলশানের জিম্মি সংকট সরকারি ব্যর্থতারই প্রমাণ


গত শুক্রবার রাতে ঢাকা মহানগরীর অভিজাত গুলশান এলাকায় হলি আর্টিজান বেকারী রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলা ও রুদ্ধশ্বাস বারো ঘণ্টার জিম্মি সংকট বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলংকজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে। সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করতে গিয়ে বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিনসহ ২ জন পুলিশ অফিসার, ১ জন ভারতীয়, একজন বাংলাদেশী আমেরিকানসহ ৩ জন বাংলাদেশী, ৭ জন জাপানী ও ৯ জন ইতালীয় নাগরিক নিহত হয়েছেন। পুলিশ অফিসার ছাড়া বাকি ২০ জনকে সন্ত্রাসীরা গলা কেটে হত্যা করেছে।
বলাবাহুল্য ১২ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অপারেশন শেষে সেনাবাহিনীর অপারেশন থা-ার বোল্টের মাধ্যমে সংকটের অবসান ঘটে এবং এতে ৬ জঙ্গি নিহত হয়, একজন সন্দেহভাজন গ্রেফতার এবং ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন। বিরোধী দলের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক পথে মানুষের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়ে তারা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসীদের সমূলে নির্মূল করে বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রত্যয় ঘোষণা করেন।
এদিকে গুলশানের ঘটনার নিন্দা করে দেশ বিদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানরা বিবৃতি দিয়েছেন এবং গণমাধ্যমসমূহ এই ঘটনার উপর বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রচার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে মন্তব্য করেছেন যে, শেখ হাসিনার সরকার দেশে জঙ্গি তৎপরতা বিস্তার রোধের চেয়ে নিজেদের অবস্থান সংহত করা এবং বিরোধীপক্ষকে কোণঠাসা করতে বেশি শক্তি ব্যয় করছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলেছে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদক্ষ শাসন বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী সন্ত্রাস এবং অস্থিতিশীলতার ভিত্তি রচনা করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এখন নষ্ট করার মতো সময় নেই। দেশের প্রধান বিরোধী পক্ষকে যদি স্তব্ধ করে রাখা হয় তাহলে একের পর এক সরকার বিরোধী পক্ষ সন্ত্রাসের পথ বেছে নেবে। ওয়াশিংটন পোস্ট আরো বলেছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশই দেশটিতে জঙ্গিবাদী তৎপরতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে। ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান উড্রো উইলসন সেণ্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগলম্যান বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অভ্যন্তরে সকল সন্ত্রাসী ঘটনার জন্য বিরোধী জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপিকে দায়ী করছেন। কিন্তু দেশে অন্য কোন জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব একেবারে অস্বীকার করার ফলে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী তৎপরতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। পত্রিকাটিতে আরো উল্লেখ করা হয় যে গত মাসে সরকারের একজন সিনিয়রমন্ত্রী সন্ত্রাসী ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে ইসরাইলের ষড়যন্ত্রের একটি অস্পষ্ট অভিযোগ আনেন। বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সন্ত্রাসী তৎপরতা রোধে পুলিশী অভিযানে অন্তত ১২ হাজার মানুষকে আটক করা হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগই ছোট খাট অপরাধী এবং বিরোধী দলের সমর্থক নিরপরাধ মানুষ।
লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, প্রায় দেড় বছর ধরে পশ্চিমা গোয়েন্দারা বাংলাদেশকে বড় ধরনের হামলার আশংকা করে আসছিলেন। বিদ্যমান জঙ্গি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ঢাকার উপর পশ্চিমা দেশগুলোর তরফ থেকে চাপ আসে। কিন্তু এতে কাজ হয়নি। ব্যবস্থা নেয়ার বদলে আওয়ামী লীগ সরকার এই পরিস্থিতি থেকে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ে সচেষ্ট ছিল। তারা উল্টা তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উপর দোষ চাপিয়েছে বা দেশে আইএস বা আল কায়েদার মতো কোনও গোষ্ঠীর সাথে সংশ্লিষ্ট জঙ্গি নেটওয়ার্কের অস্তিত্ব সরাসরি অস্বীকার করেছে। পত্রিকাটি তার রিপোর্টে বলেছে, ২০১৩ সাল থেকে গত তিন বছরে সন্ত্রাসী হামলার ভয়াবহতা দেখেছে বাংলাদেশ। অথচ সরকার এসব হত্যাকা-ের দায়ভার চাপিয়েছে বিরোধী দলের উপর। জঙ্গী দমনের নামে আটক করেছে বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। শুক্রবারের এই রক্ত ভেজা জঙ্গি হামলাকে তাই জঙ্গি দমন নয় বিরোধী দমনের প্রায়শ্চিত্ত বলে বৃটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান মন্তব্য করেছে।
বিদেশী পত্রপত্রিকা বা গণমাধ্যম কেন বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ দেশের বিদ্যমান হালচাল সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিরোধী দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াত ও তাদের অংগসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের উপর রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাসের যে স্টিম রোলার চালাচ্ছে তা নজিরবিহীন। সারাদেশ এখন বিরোধীদের জন্য কারাগারে পরিণত হয়েছে। শহরে হোক গ্রামে হোক, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকা- চালাতে পারেন না। প্রতিশ্রুতিশীল ও প্রতিভাবান রাজনৈতিক নেতা এবং ছাত্র নেতৃবৃন্দকে জেল, জুলুম, ক্রসফায়ার ও ফাঁসির শিকার বানানো হচ্ছে। মানুষের মৌলিক অধিকার বলতে এখন কিছু নেই, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা দলীয় সন্ত্রাসের কবলে পড়ে প্রহসনে পরিণত হয়েছে। বিচার বিভাগ, আইন-শৃঙ্খলা বিভাগ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক সকল প্রতিষ্ঠান দলীয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। রাস্তাঘাট, কর্মস্থল, বাড়িঘর, শোবার ঘর কোথাও মানুষের নিরাপত্তা যেমন নেই, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টিও নেই। পক্ষান্তরে ক্ষমতাসীন দল ও তার অংগ সংগঠনের নেতা কর্মীরা দেশকে একটি লুটপাট সমিতিতে রূপান্তরিত করেছে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, খুন, রাহাজানি, ব্যভিচার, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের নিয়ে টানাটানি, উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উপর হামলা, পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনতাই, প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে মানুষ হত্যা, গ্রেফতার বাণিজ্য, ব্যাংক লুট আধিপত্য বিস্তারকে নিয়ে সন্ত্রাস, গোলাগুলি এবং খুনাখুনি, বিরোধীদের হত্যা ও বাড়িঘর লুট প্রভৃতি এমন কোনও অপরাধ নেই যার সাথে ক্ষমতাসীন দল ও তার অংগসংগঠন জড়িত নেই। এর ফলে সারা দেশের আবহাওয়া এমনভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে যা যে কোনও সময় জীবন্ত আগ্নেয়গিরির আকার ধারণ করে ধ্বংসাত্মক অগ্ন্যুৎপাতের জন্ম দিতে পারে। ক্ষমতাসীন দলের দুঃশাসন, ক্ষমতার অপব্যবহার বিরোধী দল নিধনের অদম্য স্পৃহা ও তাদের উপর অত্যাচার নিপীড়ন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দেশবিরোধী তৎপরতা ও দেশের স্বার্থ বিসর্জন প্রভৃতি মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে এই ক্ষোভ যে কোনও সময় গণবিস্ফোরণে পরিণত হতে পারে। ঐ বিস্ফোরণকে সন্ত্রাস বলে আখ্যায়িত করা বিশ্ব জনমতকে ধোঁকা দেয়ার সামিল হবে।
এখন গুলশানে ফিরে আসি। গুলশানে যা ঘটেছে তা শুধু অমানবিক নয়, বাংলাদেশের মানুষের জন্য চরম অপমানকরও। বিদেশেীদের হত্যার ঘটনা বাংলাদেশকে সারা দুনিয়ায় অমানুষের দেশ হিসেবে পরিচিত করেছে। খুনিদের যে পরিচয় পাওয়া গেছে তাতে তাদের সাথে ইসলামের বা ইসলামী কোনও সংগঠনের ন্যূনতম সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না। ঘটনার পর পর শাহরিয়ার কবির এর জন্য জামায়াতকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছেন। মন্ত্রী তোফায়েল আহমদ জামায়াত বিএনপির ওপর দোষ চাপিয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমও একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। কোন কোন ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে যে জামায়াত নেতা মীর কাসেমের আসন্ন ফাঁসি ঠেকানোর জন্য জামায়াত এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
আবার বাংলাদেশের কোন কোন মহলের মতে বাংলাদেশে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে সেনা ও বিশেষ বাহিনী প্রেরণের পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা বাংলাদেশের কিছু বিভ্রান্ত তরুণকে দিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। গুলশান হামলার পর পর ভারতের তরফ থেকে বিশেষ বাহিনী প্রেরণের প্রস্তাব তাদের এই অভিলাষেরই প্রত্যক্ষ প্রমাণ। সোস্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে যে বিশ্লেষণ চলছে তা দীর্ঘ দিন অব্যাহত থাকবে বলে অনুমান করা যায়। তবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই ঘটনা সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশের মাথা হেঁট করে দিয়েছে এবং এই জাতিকে দীর্ঘদিন এর খেসারত দিতে হবে।
গুলশানে জঙ্গিদের হামলা এবং বিদেশী নাগরিক, পুলিশ অফিসার এবং সাধারণ নাগরিকসহ ২৮ জনের মৃত্যু একটি ভয়াবহ ঘটনা। আমরা মৃত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি এবং তাদের স্বজনদের প্রতি সহানুভূতি জানাই। উদ্ধার তৎপরতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ বাহিনী যে ভূমিকা পালন করেছে তার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। সেনা বাহিনীর তরফ থেকে আইএসপিআর যে বিবৃতি দিয়েছে তাতে সরকার প্রধানের ভূয়সী প্রশংসা করে বলা হয়েছে যে, তিনি উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেয়ার জন্য তাদের নির্দেশ দিয়েছেন এবং ঐ নির্দেশ অনুযায়ী তারা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে জীবিতদের উদ্ধার করেছেন এবং জঙ্গিরা নিহত হয়েছে। সকলের মনে এখানে একাধিক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। জঙ্গিরা শুক্রবার রাতে রেস্তোরাঁয় হামলা করে সেখানে অবস্থানরত দেশী বিদেশী লোকদের জিম্মি করেছে। তাদের হাতে দু’জন পুলিশ অফিসার নিহত ও অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এটা রাতেই ঘটেছে। এই ঘটনা পরিস্থিতির ভয়াবহতারই পরিচায়ক। এই যদি অবস্থা হয়, সরকার প্রধান রাতেই সেনা হস্তক্ষেপের নির্দেশ দিলেন না কেন? এটা কি তার ব্যর্থতা না উদাসীনতা? দুই. জঙ্গিরা রাতেই ১৭ জন বিদেশীসহ ২০ জন জিম্মিকে গলা কেটে হত্যা করেছে এবং এতে তাদের যথেষ্ট সময় লেগেছে। রাতের বেলা সেনা হস্তক্ষেপ হলে এই লোকগুলোকে জীবন দিতে হতো না। তিন. পাঁচজন জঙ্গি সবাই নিহত হয়েছে। তাদের কি জীবিত আটক করা যেতো না? জীবিত থাকলে তাদের কাছ থেকে হয়তো এমন সব মূল্যবান তথ্য পাওয়া যেতো যা জঙ্গির উৎস ও জঙ্গি তৎপরতা দমনে সরকার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য মূল্যবান ভূমিকা রাখতে পারতো।
জঙ্গিদের যে পরিচয় পাওয়া গেছে তা বিস্ময়কর। এদের প্রত্যেকেই শিক্ষিত বিত্তশালী পরিবারের সন্তান; মাদরাসা বা তথাকথিত মৌলবাদ, ধর্মীয়, সংগঠন অথবা জামায়াতের সাথে কিংবা বিরোধী দল বিএনপির সাথে এদের কোন সম্পর্ক নেই। জিম্মি ঘটনায় জঙ্গিদের যে নেতৃত্ব দিয়েছে তার নাম রোহান ইবনে ইমতিয়াজ বলে পত্রপত্রিকায় ছবিসহ খবর প্রকাশিত হয়েছে। রোহান ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক ইমতিয়াজ খান বাবুলের ছেলে। বাবুল বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন, বাস্কেট বল ও সাইক্লিং ফেডারেশনেরও একজন পদস্থ কর্মকর্তা। অনেকের কাছে খুনি ও সন্ত্রাসী বলে পরিচিত আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের শ্যালক হচ্ছেন এই ইমতিয়াজ খান বাবুল। বাবুল দীর্ঘদিন মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জানা গেছে টপ টেরর কামাল পাশা বাবুলের শ্যালক। এই পাশা এক সময়ের আলোচিত দুই ভাই রুবেল এবং জুয়েলকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে ৫ মিনিটের মধ্যে খুন করেছিল। অর্থাৎ জঙ্গি রোহান ইবনে ইমতিয়াজ সন্ত্রাসী পরিবারেরই সন্তান, সন্ত্রাসী জঙ্গি হিসেবে তার উত্থান ও পতন। এর সাথে ধর্ম বা জিহাদের কোনও সম্পর্ক নেই। জঙ্গি নিবরাস ইসলাম, মীর সাবিহ মুবাশ্বির, রাইয়ান মিনহাজ ও আন্দালিব আহমেদও ইংরেজি মাধ্যমের ছেলে এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। এদের মধ্যে প্রেম বিরহে উচ্ছন্নে যাওয়া ছেলেও আছে এবং প্রায় সবাই ধর্মহীন পরিবেশে মানুষ হয়েছে। ইসলামী জীবন ব্যবস্থার সাথে তাদের কখনো সম্পর্ক ছিল না। তাদের পিতামাতা তাদের চরিত্র গঠনের জন্য কখনো কোনও উদ্যোগ নিয়েছেন বলে মনে হয় না।
বাংলাদেশ বর্তমানে এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ক্ষমতা ও অর্থবিত্তের লোক ক্ষমতাসীন মহলের একটি অংশকে বিবেকহীনই শুধু করে তোলেনি, তারা মনুষ্যত্ববোধও হারিয়ে ফেলেছেন বলে মনে হয়। তাদের উৎসাহে সন্ত্রাস শান্তিপূর্ণ এই দেশটিকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছে। পাশাপাশি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপরও আঘাত হানা শুরু হয়েছে। সরকার প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে বিরোধীদল দমনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তারা ৭৫ বছরের পুরনো ও অভিজ্ঞ এবং তৃণমূল পর্যায় বিস্তৃত একটি রাজনৈতিক দলসহ বিরোধী প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার অপকর্মে লিপ্ত রয়েছেন। তাদের দলের লোকদের অপরাধ-সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। মানুষের প্রতিবাদের ভাষা কেড়ে নিয়েছেন। এই অবস্থায় গুলশানের ঘটনা শুধু সরকার নয় বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য একটি অশনিসংকেত বলে অনেকে মনে করছেন। বিদ্যমান পরিবেশে সরকার যদি নিজের এবং দেশের ভাল চান তাহলে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া উচিত বলে দেশবাসী মনে করেন। নিজের অযোগ্যতা বিরোধী প্রতিপক্ষের ওপর চাপিয়ে দিয়ে তারা কোনও কুল রক্ষা করতে পারবেন বলে মনে হয় না।
ড. মোঃ নূরুল আমিন

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads