শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৬

এ কেমন কাণ্ড?


জনপ্রতিনিধিরা জনগণের কল্যাণে নিবেদিত থাকবেন, এটাই তো প্রত্যাশা। কিন্তু কিছু কিছু জনপ্রতিনিধি এমন আছেন, যারা কল্যাণের বদলে অকল্যাণের কাজেই নিয়োজিত থাকেন। এমন একজনকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন মুদ্রিত হয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায়। ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে মুদ্রিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, কাঞ্চন-কুড়িল ৩০০ ফুট প্রশস্ত সড়কের (বিশ্বরোড) পাশে ভোলানাথপুর এলাকায় রাজউকের প্রায় হাজার কোটি টাকার জমি জবরদখল করে ‘নীলা মার্কেট’ গড়ে তোলা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলম নীলা রাজউকের কর্মকর্তা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই মার্কেটটি গড়ে তুলেছেন। কোনোরকম অনুমতি ছাড়াই এখানে তাঁতবস্ত্র, কুটিরশিল্প ও বিনোদন মেলার নামে চালানো হচ্ছে অশ্লীল নৃত্য, জুয়া ও মাদক ব্যবসা। এসব থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। প্রশাসনের চোখের সামনে জবরদখলসহ অবৈধ কর্মকাণ্ড চললেও তারা চোখ বুজে রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, নীলা মার্কেটে পাকা, আধাপাকা মিলিয়ে কয়েকশ দোকান। এসব দোকান থেকে রোজ প্রায় ৫০ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে। নীলা মার্কেটকে ঘিরে আশেপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে মাদকের আস্তানা। এ সব আস্তানায় অতি সহজেই মিলছে মরণ নেশার জন্য বিভিন্ন মাদক। শুধু তাই নয়, এই মার্কেটের আশপাশ নির্জন এলাকা বলে সেখানে প্রতিদিন শত শত যুবক-যুবতী ঘুরতে এসে অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। নীলা মার্কেটের সামনেই কবরস্থান। কবরস্থানের ভেতরেই ‘মাদক ভাণ্ডার’ গড়ে তুলে খুচরাভাবে ক্রেতাদের কাছে হরদম বিক্রি করা হচ্ছে মাদক।
একজন জনপ্রতিনিধির বেআইনী ও সমাজবিরোধী এমন কর্মকাণ্ডে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে হতাশা। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী ও উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান হবার সুবাদে নীলার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলে না। এছাড়া তার ভাই বকুল এলাকার নিরীহ মানুষজনকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে হাজার হাজার টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও ক্ষমতার বাণিজ্য থেকে ভাইস চেয়ারম্যান নীলার নামে মাসে ৫০ লক্ষাধিক টাকা আদায় হচ্ছে বলে চাউর রয়েছে। নীলাকে ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগেও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। নীলার কর্মকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনে যে প্রতিবেদনটি মুদ্রিত হয়েছে তাতে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। একজন জনপ্রতিনিধি আইন অমান্য করে কিভাবে রাজউকের জমি জবরদখল করে? আর অবৈধভাবে সেখানে মার্কেট গড়ে তুলে সেখানে জুয়া, মাদক ব্যবসাসহ যেসব অশ্লীল কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে, তা কি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখে পড়ছে না?
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজউকের কর্মকর্তা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নীলা এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আমরা জানি, ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রতিনিধিদের পরিচিতি ও প্রভাবটা একটু বেশিই থাকে। তাই বলে কি তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করবেন? জনগণ তো তাদের কাছ থেকে কল্যাণকর এবং দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে। এখন ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ার কারণে প্রশাসনের প্রশ্রয় পেয়ে তারা যদি জনস্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকেন তাহলে কি তাদের আর জনপ্রতিনিধি থাকার কোনো যুক্তি থাকে? সরকার তো কথা কথায় বিরোধী দলের মেয়র কিংবা জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করেন কিংবা নিয়ে আসেন আইনের আওতায়। কিন্তু সরকার দলীয় এসব জনপ্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে আইনী ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। কেন? এ কারণেই দেশে আইনের শাসন তথা সুশাসনের সংকট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিষয়টি সরকার উপলব্ধি করে যৌক্তিক পদক্ষেপ গ্রহণে এগিয়ে আসে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads