শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬

গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রশ্ন-

যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সাময়িকী ‘ফরেন পলিসি’ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ধীরে ধীরে নিরাপত্তা রাষ্ট্রের গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে। বিরোধী মতের মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। গুম ও অপহরণের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট আইনজীবী, মানবাধিকার গ্রুপ ও গুম হওয়া পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের আটক রেখে নির্যাতন করা হতে পারে। কিন্তু তাদের পরিবার জানে না তাদের অবস্থান কিংবা তারা জীবিত না মৃত। গেল ৫ বছরে শত শত বাংলাদেশী বিশেষ করে বিরোধী মতের মানুষ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম হয়েছে বলে তাদের স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে যাদের মৃত্যু হয়েছে অথবা জেলে আছেন, তাদের পরিবার এখন নজরদারিতে রয়েছেন বলে ফরেন পলিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
গত ১৬ ডিসেম্বর ফরেন পলিসিতে মুদ্রিত ‘বাংলাদেশে কি বিরোধী মত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে?’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়- “যখন সাদা পোশাকধারী পুলিশ মীর আহমেদ বিন কাসেমের কাছে আসলো, তখন তাকে জুতা পরার সময়ও দেয়া হয়নি। তার স্ত্রীর ভাষ্যমতে, ৯ আগস্ট রাত ১১টায় তাদের ঢাকাস্থ এ্যাপার্টমেন্ট থেকে তাকে তুলে নেয়া হয়। এ সময় তাদের দুই মেয়ে চিৎকার করে দৌড়াচ্ছিল। এর ৫ দিন আগে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে তার মায়ের সাথে আদালতে শুনানিতে যাওয়ার সময় একদল মানুষ তাদের গাড়ি আটকে অন্য একটি গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যায়। সমসাময়িক সময়েই অন্তত ৩০ জন সাদা পোশাকধারী লোক সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমান আযমীর বাসায় যায় এবং ওই দু’জনের মতোই তাকে গুম করে। তার ভাই সালমান আল আযমীর ভাষ্যমতে, অস্ত্রের মুখে তার ভাইকে এ্যাপার্টমেন্ট থেকে ধরে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, এ সময় তারা জানিয়েছিল তারা পুলিশের একটি বিভাগ থেকে এসেছে। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, এই তিন ব্যক্তিই বিরোধী দলের তিনজন সিনিয়র নেতার সন্তান। তাদের ব্যাপারে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, নিরাপত্তা বাহিনী তাদের তুলে নিয়ে যায়। যদিও কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে তাদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করছে।”
ফরেন পলিসির প্রতিবেদনে যে চিত্রটি ফুটে উঠেছে তা ভেবে দেখার মতো। আমরা জানি, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশ। গণতান্ত্রিক চেতনায় ন্যায়, সাম্য ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। এ দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত থাকবে এটাই তো জনগণের আকাক্সক্ষা। স্বাধীনতার ৪৫ বছরে দেশ অনেক অগ্রসর হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়টি চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এরপরও কিছু বিষয় আমাদের এইসব অহংকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো নয়। পত্র-পত্রিকায় হত্যা, গুম ও অপহরণের যে চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। হয়তো এই কারণেই ফরেন পলিসি শিরোনাম করেছে ‘বাংলাদেশে কি বিরোধী মত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে?’
আমরা জানি, বাংলাদেশ গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ঐতিহ্যে পুষ্ট। বর্তমান সরকারও গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের মর্যাদা ও গুরুত্বে খুবই সচেতন। এই সরকারের শীর্ষনেতারাও বহুবার বলেছেন, তারা গুম-অপহরণ ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরোধী। তাই এইসব ক্ষেত্রে যে প্রশ্নগুলো এখন উঠেছে তার ন্যায়ভিত্তিক সমাধান প্রয়োজন। আমরা মনে করি গুম-অপহরণ ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ন্যায়ভিত্তিক বিধি বিধানের আলোকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিলে সরকারের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। সময়ের দাবি পূরণে যৌক্তিক পদক্ষেপ গ্রহণে সরকার কতটা এগিয়ে আসে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads