শুক্রবার, ১২ আগস্ট, ২০১৬

রোমের পুলিশ


সম্প্রতি ইটালির রোমে পুলিশ চমৎকার একটি কা- ঘটিয়েছে। অবশ্য পুলিশের বিরুদ্ধে পৃথিবীর প্রায় সবদেশেই কমবেশি অভিযোগ থাকেই। পুলিশকে চোর-ডাকাত গুণ্ডা-বদমায়েশ, হন্তারকের মতো অপরাধীরা ভয় পাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, বহু দেশে সাধারণ মানুষও পুলিশের ভয়ে ভীত ও আতঙ্কিত থাকেন। অথচ পুলিশের এমন হবার কথা নয়। পুলিশ হবে মানুষের তথা জনগণের বন্ধু। কেউ জুলুমের শিকার হলে, নির্যাতিত বা নিগ্রহের মুখোমুখি হলে পুলিশের কাছে সহায়তা চাবেন, পুলিশকে বন্ধু মনে করে ছুটে যাবেন থানায়। এই হচ্ছে নিয়ম। কোথাও দুষ্ট মানুষের দ্বারা অঘটন ঘটবার আশঙ্কা বুঝতে পারলে পুলিশ নিজেই সেখানে উপস্থিত হয়ে তা নিরসন করবে। এমনকি সরকারি সম্পত্তি, জনগণের কোনও সম্পদ বিনষ্ট হতে দেখলেও পুলিশ সেখানে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। এছাড়া সরকারি কর্মচারি, কর্মকর্তাসহ সাধারণ জনগণের জীবনের নিরাপত্তার দায়িত্বও থাকে পুলিশের ওপর। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন হচ্ছে পুলিশের প্রধান কাজ। প্রয়োজনে দুষ্টদের আইন-আদালতের কাছে তুলে দিয়ে সমাজের মানুষকে নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন রাখার দায়িত্বও থাকে পুলিশের ওপর। কিন্তু পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহে পুলিশকে যেভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়, তা তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেই চোখে পড়ে না। বরং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশই প্রতিপক্ষ হয়ে জনগণের ওপর চড়াও হয়। পাবলিককে মারধর করে। তাই শুধু আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর অনেক দেশেই আজকাল পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে।
রোমের পুলিশ যে কাণ্ড ঘটিয়েছে সে কথায় ফিরে যাওয়া যাক। প্রায় ৭০ বছর ধরে এক সঙ্গে ঘরসংসার করছেন সেখানকার এক দম্পতি। এই দীর্ঘদিন এক সঙ্গে চলবার পরও মাঝে মধ্যে দেখা দেয় টানাপোড়েন। রোমের একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন ৯৪ বছর বয়স্ক গৃহকর্তা ও তার লাইফপার্টনার। তারও বয়স ৮৯ বছর। অর্থাৎ এই দম্পতি যখন ঘর বাঁধেন তখন তাদের একজনের বয়স ছিল ২৪ এবং আরেকজনের ১৯। সম্প্রতি এক রাতে এই দম্পতির ফ্ল্যাটে তুমুল ঝগড়া বাধে। প্রতিবেশীরা বিরক্ত হয়ে পুলিশকে জানান বিষয়টি। খবর পেয়েই ছুটে আসে ৪ পুলিশের একটি দল বয়স্ক দম্পতির ফ্ল্যাটে। পুলিশ এসেই বুঝতে পারে রান্নাবাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডার সূত্রপাত দুই বুড়োবুড়ির মধ্যে। বিষয়টি অনুধাবন করে পুলিশসদস্যরাই ঘরে থাকা বাটার ও চিজ দিয়ে দম্পতিটির জন্য পাস্তা রান্না করে। অতঃপর দুইজনকে এক টেবিলে বসিয়ে পাস্তা খাইয়ে শান্ত করে পুলিশ। পুলিশের রান্না করা পাস্তা বেশ তৃপ্তির সঙ্গে বুড়োবুড়ি খেয়েছেন বলে এসোসিয়েট প্রেস জানিয়েছে। নিজেদের রান্না করা পাস্তা এক সঙ্গে বসিয়ে বয়স্ক দম্পতিকে খেতে দিতে দিতে হয়তো রসিক পুলিশ মজাও করেছে। সুন্দর করে বুঝিয়েছে যে, এই বয়সে ঝগড়া করা যেমন নিজেদের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়, তেমনই তা প্রতিবেশীদের জন্যও অপ্রীতিকর। এই যে পুলিশের মহানুভবতা, পারিবারিক বিতণ্ডা মিটিয়ে দেবার উদ্যোগ তা নিশ্চয়ই দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যপরায়ণতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এমন পুলিশ হলেই না সমাজে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ও আস্থা বাড়বে। সাধারণ মানুষ পুলিশকে ভাববে বন্ধু। অবশ্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশকে কখনও কখনও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। অনেক সময় জীবনও দিতে হয়। এমন দৃষ্টান্তও রয়েছে আমাদের দেশসহ পৃথিবীতে বহু। অবশ্য অনেক দেশে পুলিশকে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেন। বিপত্তি ঘটে এখানেই। পুলিশ তখন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। জনগণের অর্থে প্রতিপালিত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে অশুভ ইঙ্গিতে সাধারণ মানুষের ওপর চড়াও হয়। ছড়ি ঘোরায়।
আমরা সব পুলিশকে দোষী বলতে চাই না। আমাদের পুলিশ বৃটিশদের তৈরি পুলিশ নয়। আমাদের ভাই-বেরাদর ও সন্তানরাই পুলিশের মহান দায়িত্বে নিয়োজিত। আমরা রোমের এই চার পুলিশসদস্যের মতো পুলিশ দেখতে চাই। পুলিশকে আমরা জনগণের বন্ধু হিসেবে পেতে চাই। পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্যপরায়ণতার জন্য আমরা গৌরবান্বিত বোধ করতে চাই। অহঙ্কার করতে চাই।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads