সোমবার, ২৩ মে, ২০১৬

ছাত্রনেতারা এখন অপহরণ করে!


তরুণরা জাতির ভবিষ্যৎ। দরিদ্র পিতাও চান তার সন্তান লেখাপড়া করে মানুষ হবে, সংসারের হাল ধরবে। এজন্যই তো তারা সন্তানদের স্কুল-কলেজে পাঠান। বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র দেশে সুষ্ঠুভাবে একটি কলেজ পরিচালনা করা সহজ কাজ নয়। অনেক কলেজেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই, ছাত্রাবাস তো দূরের কথা। যে কলেজে ছাত্রাবাস আছে সে কলেজের ছাত্রদের অনেক সুবিধা। যাতায়াতের কষ্ট থেকে তারা বেঁচে যায়, বেঁচে যায় তাদের সময় ও অর্থ। এদিক থেকে রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্রদের ভাগ্য ভালোই বলতে হবে। তাদের রয়েছে ছাত্রাবাস। ছাত্রাবাসের ছাত্ররা সুশৃংখলভাবে চলবে, লেখাপড়ায় মনোযোগী হবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু তিতুমীর কলেজের ছাত্রাবাসে এমন একটি ঘটনা ঘটে গেল, যা ছাত্রদের সাথে যায় না। দৈনিক প্রথম আলোয় ২১ মে মুদ্রিত খবরটিতে বলা হয়, ব্যবসায়ীকে অপহরণের অভিযোগে রাজধানীর তিতুমীর কলেজ শাখার ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদকসহ ৩ জনের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গত বৃহস্পতিবার রাতে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী মো. তৌফিক মোল্লাকে আসামীরা পিস্তল ঠেকিয়ে তুলে নিয়ে তিতুমীর কলেজের আঁখি ছাত্রাবাসের ৩০৮ নম্বর কক্ষে আটক রাখে। তারা তাকে মারধর করে এবং ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
অপহরণকারী ছাত্রলীগের ৩ নেতা হলেন তিতুমীর কলেজ শাখার যুগ্ম সম্পাদক নূরুজ্জামান উজ্জ্বল, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইফুল্লাহ এবং তিতুমীর কলেজের ছাত্র ও গুলশান থানা ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মারুফ হাসান। মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী মো. তৌফিক মোল্লাকে মহাখালী পর্যটন হোটেলের সামনে থেকে অপহরণ করে ছাত্রলীগ নেতারা। এরপর তাকে তিতুমীর কলেজ ছাত্রাবাসে আটকে রাখা হয়। অপহরণকারীরা তাকে বেধড়ক মারধর করে এবং ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে খবর পেয়ে বনানী থানার পুলিশ উক্ত ব্যবসায়ীকে ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করে। এ সময় সেখানে থাকা তিন ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় তৌফিক মোল্লা ওই তিন ছাত্রলীগ নেতাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
ভাবতে অবাক লাগে, ছাত্রনেতারা কী করে দেশের কোনো নাগরিককে অপহরণের কাজে জড়িত থাকে? আরো বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, অপহরণের মতো ন্যক্কারজনক কাজ করে তারা কোনো গোপন জায়গায় আশ্রয় নেয়নি, বরং তারা ব্যবসায়ীকে নিজ কলেজের ছাত্রাবাসে এনে আটকে রেখেছে এবং দাবি করেছে মুক্তিপণ। কলেজ ছাত্রাবাসে এনে কাউকে আটকে রাখলে যে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যেতে পারে এবং অপরাধমূলক এ কাজের জন্য তাদের শাস্তি হতে পারে- সে বিষয়টিকে যেন তারা আমলেই নিতে চায়নি। তারা এতটা দুঃসাহসী ও বেপরোয়া হয়ে উঠল কেমন করে? তাদের মধ্যে কি এমন কোনো ধারণা জন্ম নিয়েছে যে, আমরা সরকারি দলের ছাত্রনেতা, আমাদের গায়ে হাত দেবে কে? বিষয়টি এমন হলে তা আমাদের ছাত্র রাজনীতি ও জাতীয় রাজনীতির জন্য দুঃসংবাদ।  ভাবনার বিষয় হলো, এমন দুঃসংবাদ কোনো ব্যতিক্রমী বিষয় নয়। ছাত্র নেতাদের অপরাধমূলক ও সন্ত্রাসের নানা ঘটনা সারা দেশের শিক্ষাঙ্গন, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য এক বড় অশনি সংকেত।  ব্লেম-গেম ও দলীয় ক্ষুদ্র রাজনৈতিক চেতনা থেকে বেরিয়ে এসে জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে বিষয়টিকে বিবেচনা করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকার, সরকারি দলসহ দেশের রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে আমরা যৌক্তিক ভূমিকা আশা করি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads