শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৬

বৈশাখী উৎসবে পান্তা ইলিশ ভক্ষণ করে ফুড পয়জনিং ॥ ২৫ জন হাসপাতালে


সেই ছোটকাল থেকে শুনে আসছি যে, বাঙ্গালি নাকি হুজুগে জাতি। অবশ্য বাঙ্গালি বলতে আমি সমস্ত বাঙ্গালিকে বলছি না। বাংলাদেশ ছাড়াও আরো কিছু বাঙ্গালি বাস করেন সীমান্তের ওপারে। ওরা হলেন, পশ্চিম বাংলার তথা ভারতীয় বাঙ্গালি। পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী বাঙ্গালির আনুমানিক সংখ্যা ৯ কোটি। বাংলাদেশের বাঙ্গালির সংখ্যা ১৬ কোটি। ভারতের ৯ কোটি বাঙ্গালি হুজুগে জাতি কিনা সেটি এই বাংলায় বসে আমি সঠিক বলতে পারব না। তবে বেশ কয়েক যুগ থেকে লক্ষ্য করছি, মাঝে মাঝেই বাংলাদেশের বাঙ্গালিদের মধ্যে একটি হুজুগ ওঠে ও সেই হুজুগে তারা মেতে ওঠে। যেমন পান্তা ইলিশের হুজুগ। পহেলা বৈশাখে নববর্ষ বরণের সাথে পান্তা ইলিশের কি সম্পর্ক রয়েছে সেটি আমার জানা নাই। তবে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশ কেনার যে হুজুগ উঠছে কয়েক বছর ধরে, সেই হুজুগে ইলিশ মহাশয় এবার এক লাফে ১ লক্ষ ১৬ হাজারে উঠলেন। অন্য মানুষের মাথায় হাত। কি হবে সেই ইলিশ দিয়ে? সেই ইলিশ দিয়ে তারা বাংলা নববর্ষে পান্তা ইলিশ খাবে।
পান্তা ভাতকে নিয়ে  বৈশাখী সাহেবদের এ কি নির্মম রসিকতা! ইলিশ নিয়ে পাগলামি এমন পর্যায়ে গেল যে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত ঘোষণা করলেন যে, নববর্ষে তিনি ইলিশ মাছ খাবেন না। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলিশ খাওয়া নিষিদ্ধ করতে হলো। তাও কি রক্ষা আছে? নববর্ষে বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলায় সরকারি প্রশাসনের উদ্যোগে ইলিশ খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। আর সেই ইলিশ খেয়ে ২৫ জন আদম সন্তান গুরুতর পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়।
পহেলা  বৈশাখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খাওয়ার তালিকায় পান্তা ইলিশ ছিল না। গণভবনে এ দিনের মেন্যুতে খিচুড়ির সঙ্গে ছিল বেগুন ভাজি, ডিম ও মুরগির মাংস ভুনা।
পহেলা  বৈশাখে পান্তা ইলিশ খাওয়া প্রসঙ্গে গত সোমবার সচিবালয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, পহেলা  বৈশাখ পালনের সঙ্গে ইলিশ খাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা গ্রামে বড় হয়েছি, গ্রামে পহেলা  বৈশাখের দিন হালখাতা হয়েছে। হালখাতা উপলক্ষে মিষ্টিমুখ করেছি। কিন্তু পান্তা ইলিশ খাওয়ার কোনো রেওয়াজ ছিল না। এমনকি পান্তা ভাত খাওয়ার নমুনাও দেখিনি।
পহেলা  বৈশাখে ইলিশ নিয়ে এতো মাতামাতি তা শহরের বিষয় এমন মন্তব্য করে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, হয়তো শহরের কোনো একজন মানুষ পহেলা  বৈশাখের দিন পান্তা ইলিশ খেয়েছিল। সেটি নিয়ে এখন হুজুগ চলছে।
বিদগ্ধজনদের মতে, একদিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ একসঙ্গে এতো ইলিশ না খেয়ে সারা বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ যাতে ইলিশ খেতে পারে সে দিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত। পহেলা  বৈশাখে ইলিশ খাওয়াকে উন্মাদনা বলে অভিহিত করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী।
পহেলা  বৈশাখে পান্তা ইলিশ খাওয়া প্রসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র বলেন, পহেলা  বৈশাখ পালনের সঙ্গে ইলিশ খাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। তাই পহেলা  বৈশাখে বাংলাদেশের মানুষের ইলিশ খাওয়া পরিহার করা উচিত। এতে জাটকা নিধন বন্ধ থাকবে। পহেলা  বৈশাখের নামে জাটকা নিধন না চালিয়ে সারা বছরের জন্য মানুষ যাতে ইলিশ খেতে পারে সকলের সম্মিলিতভাবে সেই চেষ্টা নেওয়া উচিত।
এবার পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পান্তা ইলিশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন ভাইস চ্যান্সেলর  প্রফেসর ড. এস এম ইমামুল হাকিম। গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বর্ষবরণ আয়োজনের নানা দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে কোথাও পান্তা ইলিশের মিল আছে বলে জানা নেই আমাদের।
ভি সি আরও বলেন, নববর্ষের এ সময়টি হচ্ছে রূপালী ইলিশের প্রজনন মৌসুম। এ সময়ে পহেলা  বৈশাখ উদযাপনে রূপালি ইলিশ খাওয়া মানে হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস করা। কাজেই নববর্ষ উদযাপনে পান্তা ইলিশ ছাড়া সব ধরনের আয়োজনই ছিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে।
॥দুই॥
পত্রপত্রিকার খবরে প্রকাশ, এদেশে পশ্চিম বঙ্গীয় সংস্কৃতি অনুপ্রবেশের চ্যাম্পিয়ন ছায়ানট পর্যন্ত পান্তা ইলিশের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার পান্তা ইলিশের বিরুদ্ধে প্রবল জনমত লক্ষ্য করে তারা এই বিবৃতিটি দিতে বাধ্য হয়। ঐ বিবৃতিতে বলা হয়, রাজধানী ঢাকার পহেলা  বৈশাখের মূল অনুষ্ঠানের কেন্দ্র বিন্দু হচ্ছে রমনা বটমূলে ছায়ানটের সঙ্গীতানুষ্ঠান। ছায়ানটের এই আয়োজনকে কেন্দ্র করেও পান্তা ইলিশের বিক্রির ব্যবস্থা হয় অনুষ্ঠানের আশেপাশে।
ছায়ানটের নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্দিক বেলাল একটি পত্রিকাকে বলেন, ছায়ানটের অনুষ্ঠানের আশেপাশে বিক্রি হওয়া পান্তা ইলিশ বিক্রির সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। বরাবরই আমরা বিবৃতি দিয়ে এই কর্মকা-ের বিরোধিতা করে এসেছি।
পান্তা ইলিশের এই হুজুগ ও উন্মাদনায় পড়ে বাগের হাটে ২৫ জন মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। খবরে প্রকাশ, বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে পান্তা ইলিশ খেয়ে অন্তত ২৫ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত অন্তত ২৫ জনকে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শমসের আলী, স্থানীয় সংবাদ কর্মী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার লোক রয়েছেন।
কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম জানান, রাত ১২টা থেকে সকাল পর্যন্ত ফুড পয়জনিংয়ে ২৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা সবাই পহেলা  বৈশাখে ওই অনুষ্ঠানের খাবার খেয়েছেন।
অপর এক খবরে প্রকাশ, পান্তা ইলিশের এই বৈশাখী উন্মাদনায় দেশের জাটকা নিধন উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। একটি বাংলা পত্রিকার খবর অনুযায়ী মৎস্য অধি দফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, পহেলা  বৈশাখে ইলিশের চাহিদা থাকায় জেলেরা নির্বিচারে জাটকা ধরছে। নিষিদ্ধ জেনেও বেশি দামের প্রলোভনে অপরাধ করছে তারা।
মৎস্য অধি দফতরের জাটকা সংরক্ষণ, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং গবেষণা প্রকল্পের সহকারী পরিচালক মাসুদ আরা মমি বলেন, পহেলা  বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশের চাহিদা বেশি থাকায় জাটকা ধরছে জেলেরা। বরিশাল সহ কিছু জায়গায় ইতিমধ্যে বেশি দামে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে ইলিশ সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তবে মৎস্য অধি দফতর জাটকা ধরা বন্ধ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান। জনাব মাসুদ আরা জানান, অধি দফতর নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে। তবে পহেলা  বৈশাখে যেহেতু মানুষ ইলিশ খাচ্ছে, সেটিকে তো অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। তবে ক্রেতাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, সেটি যেন জাটকা না হয়।
॥তিন॥
সুখের বিষয়, বিলম্বে হলেও এ ব্যাপারে মানুষের চেতনা ফিরছে। পান্তা ইলিশ এবং বৈশাখ উদযাপন নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে যে পাগলামি, উন্মাদনা ও হুজুগ চলছিল এবার হুজুগ সৃষ্টিকারীদেরই একটি অংশ মুখ খুলেছেন। এ ব্যাপারে অধ্যাপক যতীন সরকার মনে করেন, পান্তা ইলিশকে  বৈশাখের উপলক্ষ করা বানোয়াট ও ভণ্ডামির অংশ। এসব উদ্যোগ যারা নিয়েছে তারা সাংস্কৃতিক চোর। স্বাধীনতার পর থেকে চোরেরা এই সংস্কৃতি চালু করেছে।
এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তার এক লেখায় বলেন, গরিব মানুষের খাবার পান্তা ভাত। রাতে খাওয়ার পর অবশিষ্ট ভাত রাখার কোনও উপায় ছিল না; তাই পানি দিয়ে রাখা হতো এবং সকালে আলু ভর্তা, পোড়া শুকনো মরিচ ইত্যাদি দিয়ে খাওয়া হতো। আমিও ছোট বেলায় খেয়েছি। কিন্তু এখন পান্তা ইলিশ ধনী লোকের বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে এবং এটা দুর্মূল্যও বটে যা সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এর মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতিকে সম্মান দেখানোর পরিবর্তে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, ইলিশ খাওয়ার সিজন হচ্ছে আষাঢ় শ্রাবণ মাস।  বৈশাখ তো ইলিশ খাওয়ার সময় না। ৯০ এর দিকে এইটা শুরু হয়েছে। আগে যখন পহেলা  বৈশাখ উদযাপিত হতো, তখন গ্রামের অবস্থাপন্ন এবং ধনী পরিবারে খাবারের আয়োজনের মধ্যে থাকত চিড়া, মুড়ি, সাধারণ খই, বিভিন্ন ধানের খই, দই, লুচি, খেজুরের গুড়, খিচুড়ি, বড় কই মাছ, বড় রুই মাছ ইত্যাদি। কিন্তু ইলিশ আর পান্তার কোনও ব্যাপার ছিল না। শামসুজ্জামান খান বলেন, এখন তো শহুরে নাগরিকদের হাতে টাকা এসেছে, তাই এক লাখ-দেড় লাখ টাকা খরচ করে ওরা  বৈশাখে ইলিশ খায়।
এছাড়াও আরো সুধীবৃন্দ পহেলা  বৈশাখে পান্তা ইলিশের সম্পৃক্ততা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন। বিরোধিতা করে এসেছেন এই উদ্ভট বানোয়াট আয়োজনের। এসিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম এক লেখায় বলেছেন, সম্প্রতি পহেলা  বৈশাখের উৎসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পান্তা ইলিশ খাওয়ার রীতি। এই পান্তা ইলিশ খাওয়ার প্রচলন আগে ছিল না।
বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন লিখেছেন, পহেলা  বৈশাখে ইলিশ পান্তার কালচার একদমই নতুন প্রজন্মের।
মরহুম সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ পহেলা  বৈশাখের উৎসব সম্পর্কে একাধিক প্রবন্ধ, নিবন্ধ এবং সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন, পহেলা  বৈশাখের সঙ্গে পান্তা ইলিশের কোনও সম্পর্ক নেই। এটা কোনও গরিব মানুষের খাবার নয়। গ্রামের মানুষ ইলিশ মাছ কিনে পান্তা ভাত  তৈরি করে খায়, এটা আমি গ্রামে কখনও দেখিনি, শুনিনি।
॥চার॥
সবশেষে বাংলা নববর্ষ অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ উদযাপন সম্পর্কে একটি কথা। এ সম্পর্কে অনেক কথাই বলার ছিল। কিন্তু আজ আমি শুধু পান্তা ইলিশের মধ্যেই লেখাটি সীমাবদ্ধ রাখতে চাচ্ছি। তবুও শেষ করার আগে পহেলা  বৈশাখ সম্পর্কে একটি কথা না বললেই নয়। এখন পহেলা বৈশাখ বিগত কয়েক বছর ধরে যে চেহারায় আবির্ভূত হচ্ছে আবহমান কালের বাংলাদেশে পহেলা  বৈশাখের সেই চেহারা ছিল না। অতীতে উৎসব করে নববর্ষ পালনের তেমন কোনো ঘটনার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় না। গ্রামীণ জনজীবনে কৃষি ও ব্যবসার সঙ্গে বাংলা সনের ওতপ্রোত সম্পর্ক থাকার কারণে অতীতে গ্রামে গঞ্জে মেলা ও হালখাতার প্রচলন ছিল। শহুরে জনজীবনে এসব খুব একটা দেখা যেত না। এখন সবকিছু যেন উল্টে গেছে। গ্রামে গঞ্জে এখন মেলা ও হালখাতা প্রায় উঠেই গেছে। পক্ষান্তরে শহরে নববর্ষ উদযাপনের ঘটা শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সমাবেশ, মিছিল ইত্যাদি হচ্ছে। নববর্ষ ব্যবসা বাণিজ্যেরও একটা উপলক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পহেলা  বৈশাখে নববর্ষ উদযাপনের নামে বাদ্য বাজনা, আলপনা, মুখোশ নৃত্য, রঙখেলা, নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা প্রভৃতিকে চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে যার সঙ্গে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আচরিত সংস্কৃতির কোনো মিল নেই।
পহেলা বৈশাখকে যে চেহারায় এনে দাঁড় করানো হয়েছে সেটার পেছনে সিংহভাগ কারসাজি রয়েছে দেশের এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী সমাজ ও কর্পোরেট হাউজের। অন্য কোনো সময় এ সম্পর্কে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা রইল।
আসিফ আরসালান

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads