সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

প্রধান বিচারপতির মন্তব্যের আলোকে সাংবিধানিক সংকটের সুরাহা জাতির জন্য অপরিহার্য


আদর্শিক মিল থাকুক বা না থাকুক সরকারি চাকরিতে থাকাকালীন সময়ে সিনিয়ার-জুনিয়ার সহকর্মীদের মধ্যে আমার বেশ কিছু পছন্দনীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সাবেক সচিব ও কেয়ারটেকার সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান ছিলেন এদের মধ্যে অন্যতম প্রধান। ড. খান ব্যক্তিগতভাবে প্রচুর পড়া শোনা করতেন। বন্ধুবৎসল, সাদাসিদে জীবন ও রসিকতার জন্য যেমন খ্যাতিমান ছিলেন তেমনি স্বল্পভাষী ও শিষ্টাচারী হিসেবেও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। আশির দশকের শুরুর দিকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে তাঁর সাথে আমার অনেকটা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। তখন এরশাদের স্বৈরতান্ত্রিক সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থায় যেমনটি হয় বাংলাদেশও তখন তার ব্যতিক্রম ছিল না। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও চেতনা স্বৈরাচারী এরশাদ ও তাঁর দোসরদের পায়ের নিচে পিষ্ট হচ্ছিল। রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বত্র ছিল স্থবিরতা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ এতই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল যে, কারা দেশ চালাচ্ছেন বুঝে উঠা মুশকিল ছিল। সরকারের প্রধান ব্যক্তিরা দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে থাকতেন ব্যস্ত। নিতান্ত দেশপ্রেমের তাগিদে কতিপয় সিএসপি, ইপিসিএস, বিসিএস (CSP, EPCS, BCS), কর্মকর্তা তাদের সীমিত টীম নিয়ে সরকারি বিভাগগুলোকে চালু রেখেছিলেন। কিন্তু, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বস্তরে হতাশা ও নিষ্ক্রিয়তা লক্ষ্য করার মত ছিল। এই অবস্থায়ও ড. খান তাঁর দায়িত্ব ও রসিকতা ভুলেননি। একদিন তিনি কথা প্রসঙ্গে বললেন, “দুনিয়ার যত নাস্তিক আছে তাদের সবাইকে যদি সংগ্রহ করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয় তাহলে তারা সকলেই আস্তিক হয়ে যাবে”। তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, “কেন? কীভাবে?” তিনি বললেন, “সরকার বা নেতৃত্ব ছাড়া কোন দেশ  চলতে পারে না। কিন্তু, বাংলাদেশ চলছে। তাঁরা তাদের ভুল বুঝতে পারবেন এবং উপলব্ধি করতে পারবেন যে, সরকার বা নেতৃত্ব যখন চালাচ্ছে না তখন নিশ্চয়ই কোন শক্তি এই দেশটিকে চালাচ্ছে”। বলা বাহুল্য, তখন আমাদের ওপর প্রতিবেশী কোন দেশের ডিকটেশন বা প্রকট কোন নির্দেশনা ছিল না, সদরে-অন্দরে তাদের গোয়েন্দাদের অস্তিত্বও ছিল না। ড. খান যে অবস্থার প্রেক্ষাপটে উপরোক্ত রসিকতা করেছিলেন বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা তার চেয়ে আরও খারাপ এবং দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে বর্তমানে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে বুঝে উঠা মুশকিল যে, সরকারের অর্গানগুলো প্রকৃতপক্ষে নিজ নিজ অবস্থানে আছে কিনা। কিন্তু, এখানে এই অবস্থা দেখে বিদেশী নাস্তিকদের আস্তিক হওয়ার সম্ভাবনা এখন সম্ভবত আর নেই। কেননা, দেশেই এখন প্রচুর নাস্তিক তৈরী হচ্ছে এবং এই নাস্তিকরা বিশ্বাসের মূলে কুঠারাঘাত করতে অনেক পারদর্শী হয়ে উঠেছেন। তাদের সাথে সরকারি দল এবং বুদ্ধিব্যবসায়ীরাও জড়িয়ে পড়েছেন। ড. আকবর আলি খানের আরেকটি রসিকতা ছিল এই যে, “মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বাংলাদেশের কোন সাধারণ মানুষকে তাঁর অপরাধপ্রবণতার জন্য দোযখে পাঠাতে পারেন না।” তার কারণ জানতে  চাইলে তিনি যে উত্তর দিতেন তা হল “বাংলাদেশ স্বয়ং একটি দোযখ। শাসকরা এই দেশটিকে দোযখে পরিণত করেছেন। কাজেই মৃত্যুর পর আল্লাহ দ্বিতীয়বার এই দোযখবাসীদের দোযখে পাঠাবেন না।” তাঁর রসিকতার মধ্যে হয়ত বাস্তবতার কিছু ছোঁয়া আছে তবে, দেশটিকে যে আমরা দোযখ বা নরকে পরিণত করেছি এবং ব্যক্তিস্বার্থে এদেশের মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছি, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
ব্রাহ্ম কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আক্ষেপ করে বলেছিলেন যে, বঙ্গদেশের সাত কোটি মানুষ বাঙালী রয়ে গেছে, মানুষ হয়নি। তাঁর আরেকটি আক্ষেপ ছিল, বাঙালীরা শুরু করতে পারে কিন্তু শেষ করতে পারে না। তার কথাগুলোকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা আমাকে উপরোক্ত কৌতুক ও মন্তব্যগুলো স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। ২০১৬ সালের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের আকাশে একটা বিশাল ঝড় বয়ে গেছে। এ ঝড়ের ফলে, এই দেশের শাসন ও বিচার ব্যবস্থার সকল ইমারত ও তাদের ভিত বিধ্বস্ত ও নড়বড়ে হয়ে উঠেছে। কিন্তু, ঘূর্ণিঝড়উত্তর বিধ্বস্ত অট্টালিকার মেরামত ও পুনর্বাসন এবং সংস্কারের কাজে আজও কেউ হাত দিয়েছেন বলে জানা যায়নি। তা অসমাপ্তই রয়ে গেছে এবং আজ হোক কাল হোক দেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা তথা শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগকে তা সম্পূর্ণ অকার্যকর করে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর সম্মিলিত প্রভাব যখন নির্বাহী বিভাগের ওপর পড়বে তখন দেশ একটি অকার্যকর রাষ্ট্্েরও পরিণত হতে পারে। যা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী। বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অবসরে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মামলা বিশেষ করে সংবিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর রায় লেখার যৌক্তিতা ও আইনগত দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং বলেছেন যে, “বিচারকরা এই ধরনের অবস্থায় রায় লেখা সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী।” আমার যতদূর মনে পড়ে কয়েক মাস আগে বিচারপতি মানিক অবসর গ্রহণের প্রাক্কালে তাঁর পেনশন এবং অন্যান্য দেনা-পাওনার বিষয় চূড়ান্ত করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু, প্রধান বিচারপতি সিনহা তাতে বাধা দিয়ে বলেছিলেন যে, “নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তিনি যদি তাঁর কাছে পাওনা মামলার রায় জমা না দেন তাহলে তাঁর অবসর ভাতা ও অন্যান্য পাওনা পরিশোধ করা যাবে না। ঐ সময়ে প্রধান বিচারপতির অবস্থান ছিল অত্যন্ত পরিষ্কার এবং বিচার বিভাগের তথা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের অভিভাবক হিসেবে দেশবাসী তাঁর কাছ থেকে এই ধরনের ভূমিকাই আশা করেছিলেন। সুবিধাভোগীরা অবশ্য তখনও তাঁর বিরোধিতা করেছে। অভিজ্ঞ বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তাঁর সাথে একমত পোষণ করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমস্যার আইনানুগ সমাধান এবং অন্যথায় বড় ধরনের সংকটের আশঙ্কাও তাদের মতামতে উল্লেখ করেছিলেন। এরপর  বেশকিছুদিন বিষয়টি আর এগোয়নি। সুরাহাহীন অবস্থায় থেকে যায়। আবার, জানুয়ারি মাসে প্রধান বিচারপতি বিষয়টি তুলে আনেন এবং তার সুস্পষ্ট বক্তব্য দেশবাসীর সামনে উত্থাপন করেন। এর কারণ যাই হোক না কেন বিষয়টি যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সরকারের জন্য স্পর্শকাতর তাতে কোন সন্দেহ নেই। সারা দুনিয়ায় সরকারি কোষাগার থেকে যারা বেতন পান তারা সরকারি কর্মচারী হন, কিংবা বিচারপতি, মন্ত্রী, উপমন্ত্রী যাদের সকলকেই একটা Code of Ethics মেনে চলতে হয়। এই নীতিমালার প্রথম কথা হচ্ছে সময়ের কাজ সময়ে করা। সরকার গঠিত হয় নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য। মেয়াদ শেষ হলে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং পুরাতন সরকার দায়িত্ব ছেড়ে দেন। পুরাতন সরকারের ক্ষমতা বা আধিপত্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আর থাকে না। সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী ও বিচারকদের নিয়োগপত্র দেয়া হয়। যদি শৃঙ্খলাজনিত কারণে তারা অভিযুক্ত হয়ে অথবা, রাজনৈতিক জিঘাংসার শিকার হয়ে চাকরি না হারান তাহলে অবসরকালীন বয়স পর্যন্ত তারা চাকরি করতে পারেন। চাকরির মেয়াদ সম্প্রসারণ অথবা বিশেষ কারণে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের একটা কোটা সরকার সংরক্ষণ করতে পারেন। কিন্তু, তা যে তাঁর পূর্ব পদেই হবে তার কোন গ্যারান্টি নেই। এই অবস্থায় এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, অবসর গ্রহণের বয়সে পৌঁছালেই অবসরে যাবেন এবং যাবার আগেই তার সমস্ত দায়িত্বভার (বিচারকদের ক্ষেত্রে মামলার অসমাপ্ত রায় সমাপ্ত করে) নির্ধারিত উত্তরসূরি অথবা দপ্তর প্রধানের কাছে বুঝিয়ে দিবেন। এটা সকল সভ্য দেশেই অনুসরণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু, আমাদের দেশে এই বিষয়টি অনুসরণ করা হয়নি। শুধু তাই নয়, কোন কোন বিচারক যে কোন কারণেই হোক এক মামলার রায় লিখতে গিয়ে অন্য মামলা টেনে এনে ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির অভিযোগও উঠেছে। প্রসঙ্গত, মুন সিনেমা হলের মালিমানা নিয়ে দায়ের করা এক মামলার একজন বিচারক সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছেন যা দেশের একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা বাতিল করে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।  জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে পাস করা কেয়ারটেকার সরকার আইন তিনি একটিমাত্র কলমের খোঁচায় রহিত করে দেয়ার ফলে দেশে যে নৈরাজ্য, সংঘাত, সংঘর্ষ ও হাজার হাজার লোকের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, শত শত কোটি টাকার যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে তিনি এবং পরবর্তীকালে আপিল আদালতে যারা দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং তার বেআইনী রায়কে বহাল রেখেছিলেন তারাও এ দায় থেকে অব্যাহতি পেতে পারেন কিনা তা নিয়ে বিশ্লেষক মহলে অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে।
পাঠকদের সুবিধার্থে আমি এখানে সংবিধানে ৩য় তফসিলে বর্ণিত কয়েকটি শপথ ও ঘোষণার কথা উল্লেখ করতে চাই। এই তফসিলে রাষ্ট্রপ্রতি, প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সংসদ সদস্য, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা নির্বাচন কমিশনার, প্রধান বিচারপতি বা বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্যদের শপথ ও ঘোষণাপত্র পাঠ করার বিধান রাখা হয়েছে এবং এজন্য নির্ধারিত একটি ছকে তাদের শপথ বাক্য পাঠ করতে হয়। শপথনামার অন্তর্ভুক্ত উপরোক্ত কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেই কয়েকটি সাধারণ বিষয় রয়েছে যা সকলের জন্যই প্রযোজ্য এবং সকলেই মেনে চলতে বাধ্য। এগুলো হচ্ছে :
১. আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব।
২. আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করিব।
৩. আমি ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হইয়া সকলের প্রতি আইন অনুযায়ী যথাবিহিত আচরণ করিব।
এই তিনটি শপথ ও ঘোষণাকে সামনে রেখে যদি আমরা আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রনায়কদের আচরণ বিশ্লেষণ করি তাহলে হতাশ না হয়ে পারা যায় না এবং এক্ষেত্রে শপথ ও আচরণের মিল খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল। আদালত সম্পর্কে কিছু বলা বিপদজনক, কেননা এক্ষেত্রে আদালত অবমাননার ঝুঁকি আছে, আবার আমাদের বিচারকদের কেউ কেউ মহাসড়কে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে তাদের গাড়ি চলতে না দেয়ায় ট্রাফিক কনস্টেবলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিমানে ইকোনমি ক্লাসে টিকিট কিনে বিজনেস ক্লাসে বসতে না দেয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার বিষয়টিও উল্লেখ করতে ভুলেননি। তবে, এখানে একটি আশার কথাও আছে। ভারতীয় হাইকোর্ট এবং বাংলাদেশ হাইকোর্টের একজন বিচারপতি, বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী তাদের দুইটি রুলিংয়ে তারা বিচারকের রায়কে সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয় বলে উল্লেখ করেছিলেন। তাদের মতে বিচারকরাও মানুষ তাদের ভুল হতে পারে এবং এ প্রেক্ষিতে তাদের সমালোচনা করা যায় এবং তাতে বিচারের মান বাড়ে। আবার, আইনসভা ও বিচার বিভাগ এ দুটির মধ্যে কোনটি বড় কয়েক বছর আগে আমাদের দেশে তা নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল, কিন্তু সুরাহা হয়নি। আইনসভা একজন বিচারকের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল, কিন্তু সেই অভিশংসন হয়নি। আমার মনে হয় বিচার বিভাগ, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে শৃঙ্খলা আনয়ন, নৈরাজ্যের অবসান, সংসদের অবস্থান দৃঢ়করণ এবং সর্বোপরি প্রধান বিচারপতির মন্তব্যের আলোকে দেশে যে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে অবিলম্বে তার সুরাহা হওয়া দরকার। ‘অবসরকালীন সময়ে বিচারকদের রায় লেখার এখতিয়ার আছে ’ জাতীয় সংসদের তরফ থেকে এ ধরনের যে মতপ্রকাশ করা হয়েছে তার যেমন বাস্তবতা নেই তেমনি তার আইনগত ভিত্তি নেই। সংবিধানে বিচারকদের কিছু বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়েছে। একজন বিচারপতি সংবিধানের ৯৬ ধারা অনুযায়ী ৬৭ বছর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকতে পারেন এবং এই সংবিধানেরই ৯৯ অনুচ্ছেদে অবসর গ্রহণের পর বিচারকদের অক্ষমতার কথা পরিষ্কারভাবে বলা আছে। তিনি এক্ষেত্রে কোন আদালত বা কর্তৃপক্ষের নিকট ওকালতি বা কার্য করিবেন না। সংবিধানে উল্লিখিত বিচারকদের এ অক্ষমতার আলোকে অবসর গ্রহণের পর মামলার রায় লেখার অথবা সংক্ষিপ্ত রায়ের পরিবর্তন করার কোন ক্ষমতা বা এখতিয়ার তার নেই। এটা যদি কেউ করে থাকেন তাহলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হতে পারে। এই অবস্থায় সকল প্রকার অহংবোধ পরিত্যাগ করে সংকট সমাধানে সকল পক্ষকে এগিয়ে আসা উচিত বলে আমি মনে করি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads