শনিবার, ১১ জুলাই, ২০১৫

নাস্তিক ও মুরতাদদের প্রতি অব্যাহত প্রশ্রয় সর্বশেষ নজির গাফ্ফার চৌধুরী


এই তো ক’দিন আগেও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে কটাক্ষ করায় এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে এখন জেলের ঘানি টানছে। এরও আগে শেখ মুজিব এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করায় একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারাও জেলের ঘানি টানছে। শেখ হাসিনা এবং শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে ফেসবুকে বা অন্যান্য মাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য করা আইনের চোখে কতখানি অপরাধ সেটি আইন বেত্তা এবং বিচারকরা মন্তব্য করবেন। এ ব্যাপারে আমরা কোনো মন্তব্য করছি না। আইন মোতাবেক যদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে তাহলে আমাদের বলার কিছু নাই। কিন্তু যদি তাদের গ্রেফতার এবং শাস্তি আইন মোতাবেক না হয়ে থাকে তাহলে আইনে যা আছে তাই করা হোক।
কিন্তু আমাদের কথা অন্যত্র। আমাদের কথা হলো, যদি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলা অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে রাসূল (সা) এর বিরুদ্ধে কথা বলা, তাকে অসম্মান এবং অপমান করা কি অপরাধ নয়? যদি শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে কথা বলা অপরাধ হয় তাহলে স্বয়ং রাব্বুল আল আমিন মহান আল্লাহ্ সুবহানা তা’য়ালার বিরুদ্ধে কথা বলা কি চরম ধৃষ্টতা এবং বেয়াদবি নয়? যদি শেখ হাসিনা এবং শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে কথা বলা অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে পবিত্র কোরআনের আয়াতকে অস্বীকার করা কি সর্বোচ্চ অপরাধ নয়? শেখ মুজিব এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বললে যদি দণ্ড হয় তাহলে রাসূল (সা) এবং আমাদের প্রতিপালক রবের বিরুদ্ধে কথা বললে কি সর্বোচ্চ দণ্ড হওয়া উচিত নয়?
দুঃখের বিষয় বাংলাদেশে আজ এমন এক সময় চলছে যখন আল্লাহ্ এবং রাসূল (সা)কে অসম্মান করলে পার পাওয়া যায়। কিন্তু হাসিনা এবং মুজিবরে বিরুদ্ধে কথা বললে পার পাওয়া যায় না।
আমরা আন্দাজে এসব কথা বলছি না। লতিফ সিদ্দিকী এবং গাফ্ফার চৌধুরী সম্পর্কে সরকারের অপত্য স্নেহ দেখে এসব কথা বলতেই হচ্ছে। আজ ৯ দিন হয়ে গেল, গাফ্ফার চৌধুরীকে তার খোদাদ্রোহী বক্তব্যের জন্য গ্রেফতার তো দূরের কথা, তাকে জামাই আদরে নিউ ইয়র্ক সরকারি মেহমানদারিতে রাখা হয়েছে। আজ থেকে ৮ মাস আগে লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ খারিজ হওয়ার কথা। কিন্তু সরকার সেটি ৮ মাস ধরে ঝুলিয়ে রাখল। ৮ মাস পরে যদিও বা তাকে বহিষ্কার করার কাগজ জাতীয় সংসদের স্পীকারের কাছে পাঠানো হয়েছে, কিন্তু এখনও সে কাগজের ওপর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। স্পীকার সম্ভবত সেই প্রস্তাবটি নির্বাচন কমিশনে পাঠাবেন। নির্বাচন কমিশন অতঃপর এ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। নির্বাচন কমিশন যদি আরও ২ মাস সময় লাগায় তাহলে সব কিছু মিলিয়ে প্রায় ১ বছর অতিক্রান্ত হয়ে যাবে। দু’জন লোক কোনরূপ রাখঢাক না করে আল্লাহ্ ও রাসূল (সা) এর বিরুদ্ধে ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি করল, তারপরেও যদি তাদের বিরুদ্ধে মাসের পর মাস ব্যবস্থা নিতে সরকার এত গড়িমসি করে তাহলে সেই সরকারকে নাস্তিক ও মুরতাদদের সহযোগী বলাটা কি অন্যায় হবে?
॥দুই॥
গাফ্ফার বলেছে যে, আল্লাহর যে ৯৯টি নাম রয়েছে সেগুলো নাকি কাফেরদের দেব-দেবীদের নাম। কিন্তু আল্লাহর গুণবাচক কোনো নামে দেবতাদের নাম ছিল না বলে দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফতোয়া বোর্ড। গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জাতীয় ফতোয়া বোর্ডের মুফতিগণ বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালার কোন গুণবাচক নাম তৎকালীন সমাজে দেবতাদের নামে আদৌ ছিল না।’ ইহা মূলত মুরতাদ গাফফার চৌধুরী গংদের উদ্ভট বিকৃত মস্তিষ্কের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এ সমস্ত মুরতাদদের দৌরাত্ম্য থামাতে আমরা সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
তারা বলেন, বিতর্কিত লেখক কুলাঙ্গার আঃ গফফার চৌধুরী আল্লাহর গুণবাচক নাম নিয়ে কা-জ্ঞানহীন মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর কলিজায় আগুন ধরিয়েছে। সরকার যদি এখনই উক্ত মুরতাদ গংদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়, তাদেরকে ইসলামবিরোধী কর্মকা- থেকে থামিয়ে রাখার উদ্যোগ গ্রহণ না করে, তাহলে ইসলামবিরোধীদের দোসর হিসেবে সরকারকে চরম মূল্য দিতে হবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন- ফতোয়া বোর্ডের উপদেষ্টা মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, ফতোয়া বোর্ডের সভাপতি প্রফেসর ড. মুফতি ইয়াহইয়ার রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মুফতি ড. খলিলুর রহমান মাদানীসহ ৬৪ জন মুফতি এবং আলেমে দ্বীন।
গাফ্ফার জানে না যে, আল্লাহ্্ জাল্লাহ শানুহুর ৯৯ নামের কিছু নাম এসেছে আল্লাহ্্র নিজের পছন্দে যা কোরআনুল করিমে আল্লাহ্্ নিজেকে নিজে অভিহিত করেছেন, কিছু এসেছে জিব্রাইল ফেরেশতার পরমর্শে। ৯৯ নামের হাদিসটি আবু হোরায়রা (রা) বর্ণিত, এর সনদ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
কাবা শরীফে ৩০০ এর ওপরে যে মূর্তিগুলো ছিলো তাদের নামের সাথে আল্লাহর ৯৯ নামের কোনো মিল নেই। এ সব মূর্তির নাম হলো, লাত, উজ্জা, মানাত, অবগাল, দুল খালসা, হুবাল, মালাকবেল, নেব, নের্গাল, সিন সুয়া, নুহা, সুয়া, রুভা ইত্যাদি। এখানে ৯৯টি পবিত্র নামের কোনো সম্পর্ক নাই।
গাফ্ফার চৌধুরী বলে, ‘রসূল মানে দূত, অ্যাম্বাসেডর। গাফ্ফার কি জানে যে, রাসূল সেই ব্যক্তিকে বলা হয়, যার ওপরে জিব্রাইলের মাধ্যমে রেসালত বা আসমানী গ্রন্থ নাজেল হয়। রাসূল মাত্র চারজন, দাউদ, মুসা, ইসা (আ) এবং মুহাম্মদ (সা)। আর যারা শুধু আল্লাহর তরফ থেকে মানুষকে তার প্রতি আহ্বান জানান তারা হলেন নবী। তাদের ওপর কোনো আসমানী কিতাব নাজিল হয়নি। যেমন নূহ নবী, সালেহ নবী। তাই সব রাসূলই নবী, কিন্তু সব নবী রাসূল নন। গাফ্ফারের মাথায় এটি ঢুকেছে বলে মনে হয় না।
বাংলাদেশের ঐ সেকুলার এবং বাম গোষ্ঠী গাফ্ফারকে সব সময় মহাপন্ডিত হিসেবে হাইলাইট করেছে। যদি সে পন্ডিত হয়ে থাকে তাহলে নিউ ইয়র্ক সেদিন তার ধর্মদ্রোহী ও খোদাদ্রোহী বক্তব্য শুনে বলতেই হয় যে, সে জ্ঞান পাপী। ঠান্ডা মাথায় জেনে বুঝে যে কোরআনের আয়াতকে অস্বীকার করে সে আর মুসলমান থাকতে পারে না। গাফ্ফার ইসলাম এবং মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে গেছে।
গত ৭ জুলাই মঙ্গলবার নিউ ইয়র্ক অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সেখানকার ইমাম, আলেম ও ওলামারা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছেন যে, গাফ্ফার চৌধুরী পরিকল্পিতভাবে ধর্মীয় বিদ্বেষ সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছে। আল্লাহ্ ও রাসূলকে নিয়ে কটূক্তির পর সে আর ইসলামে থাকতে পারে না। ইতোমধ্যেই সে মুরতাদ এবং খারেজী হয়ে গেছে। প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে তাকে তওবা করতে হবে। একমাত্র তখনই সে ইসলামে ফিরে আসতে পারবে। নিউ ইয়র্কের কুইনসের বৃহৎ মসজিদ জ্যামেইকা মুসলিম সেন্টারের ইমাম মাওলানা আবু জাফর বেগ বলেন, “জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন কোনো দল বা মতের নয়, এটা বাংলাদেশের। স্থায়ী মিশনের রাষ্ট্রদূত কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে ডেকে এনে ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে পারেন না। তাকেও গাফ্ফার চৌধুরীর ইসলাম অবমাননার দায়িত্ব নিতে হবে। এজন্য স্থায়ী মিশন থেকে তাকে অপসারণ করতে হবে।” জ্যামেইকা মসজিদের মাওলানা ফায়েক উদ্দিন বলেন, “অ্যাম্ব্যাসেডর শব্দের আরবী অর্থ হচ্ছে ‘সাফিউন’। অ্যাম্ব্যাসেডর শব্দের আরবী কখনো রাসূল হিসেবে ব্যবহার হয় না। মূলত আল্লাহর পক্ষ থেকে মোহাম্মদ (সা)কে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করার পর রাসূল শব্দের শাব্দিক অর্থ থাকে না।
এক প্রশ্নের জবাবে মাওলানা ফায়েক উদ্দিন বলেন, গাফ্ফারের পুরো বক্তব্য কয়েকবার শুনেছি। তার কথা শুনে মনে হয়েছে আরবীতে তার ন্যূনতম জ্ঞান নেই। তিনি ‘আবু বকর’ নামের অর্থ বলেছেন ‘বকরির বাবা’। মূলত আবু বকর নামের অর্থ হচ্ছে ইসলামের প্রথম ‘সুশোভিত ফুল’।
আস্সাফা মসজিদের ইমাম মাওলানা রফিক উদ্দিন রেফায়ী বলেন, গাফ্ফারের কথায় মনে হয় আল্লাহর আগে দেবদেবী ছিলেন, তারপর আল্লাহ্ এসেছেন (নাউজুবিল্লাহ)। আল্লাহর গুণবাচক ৯৯ নামের মধ্যে কোনো দেবদেবীর নাম দেখাতে পারবেন না। আল্লাহর গুণবাচক নাম কোথাও থেকে ধার করার প্রয়োজন নাই। মহান আল্লাহ্ তায়াল সব বিষয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ। জ্যামাইকা মসজিদের সভাপতি ড. ওয়াহিদুর রহমান বলেন, এখানে আলোচনা সভার নামে বিতর্কিত নাস্তিক লোকদের দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে উস্কে দিচ্ছে বাংলাদেশ মিশন। এ জন্য মিশনকেও ক্ষমা চাইতে হবে।
॥তিন॥
আসলে এই সরকার ধীরে ধীরে ঠান্ডা মাথায় আল্লাহ্ রাসূল তথা ইসলামবিরোধী প্রচারণায় মদদ দিয়ে যাচ্ছে। তাই তারা একের পর এক সমাজের কিছু প্রতিষ্ঠিত কিন্তু চিহ্নিত ধর্মবিদ্বেষী ব্যক্তিকে এই জঘন্য উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মাঠে নামাচ্ছে।
তার পাশাপশি ব্লগার নাস্তিকদের প্রতি সরকারের মায়া মহব্বত এবং ভালবাসা উতলে উঠছে। নাস্তিক ব্লগার রাজিব নিহত হলে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জানানোর জন্য তার বাসায় ছুটে গিয়েছিলেন। আরেক স্বঘোষিত নাস্তিক ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনকে বিদেশে অর্থাৎ জার্মানিতে পালিয়ে যেতে সাহায্য করা হয়েছে। লতিফ সিদ্দিকী আর গাফ্ফার চৌধুরীর কথা তো এতক্ষণ বললাম। উভয়কেই জামাই আদরে রাখা হয়েছে। গাফ্ফার চৌধুরীকে সরকারি টাকায় লন্ডন থেকে নিউ ইয়র্ক নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে তাকে রাষ্ট্রীয় মেহমান হিসেবে রাখা হয়েছে। তার এই আল্লাহ্ রাসূল বিরোধী বক্তব্যের কারণে মুসলমানরা যদি ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, যদি সেই জনরোষের বিষ্ফোরন ঘটে, তাহলে সেই জনরোষ থেকে তাকে বাঁচানোর জন্য পুলিশ প্রটেকশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এই দিকে লতিফ সিদ্দিকীকে নামকা ওয়াস্তে কারাগারে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেটি কেমন কারাগার? মাত্র ২০/২১ দিন জেল খানায় থাকার পর তারই আবেদন মোতাবেক তাকে পিজি হাসপাতালের ভিআইপি কেবিনে রাখা হয় এবং বন্দি হিসেবে দেখানো হয়। এই ভিআইপি কেবিনে তিনি ছিলেন ৬ মাস। এই ৬ মাসে তার বিল উঠেছিল ৮ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। তাহলে পাঠক ভাইয়েরা ভেবে দেখুন, একজন স্বঘোষিত নাস্তিক মুরতাদকে বন্দি অবসস্থাতেও সরকার কেমন রাজার হালে রেখেছিল। ৬ মাস পর তাকে সবগুলো মামলায় জামিন দেওয়া হয়। যেখানে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল এবং নাগরিক ঐক্য নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না জামিন পাননা সেখানে লতিফ সিদ্দিকী কেমন অবলীলাক্রমে জামিন পেয়ে যায়। যেখানে রাজনৈতিক বন্দিদের জামিন হওয়ার পরেও আদালতের সেই জামিনের আদেশ জেলখানায় পৌঁছতে ২ দিন লেগে যায় সেখানে মাত্র ২ ঘণ্টার মধ্যে লতিফ সিদ্দিকীর জামিন তার হাসপাতাল অবধি পৌঁছে যায়। আর সেই জামিন পাওয়ার পর কেমন করে তৎক্ষনাৎ আগে থেকে রেডি করা গাড়িতে করে তিনি বাসায় চলে যান।
ইংরেজিতে একটি কথা আছে। সেটি হল : “You can fool some people for sometimes, but you can’t fool all people for all times.” বাংলা অনুবাদ, “তুমি কিছু সময়ের জন্য কিছু লোককে বোকা বানাতে পার। কিন্তু সব লোককে সব সময়ের জন্য বোকা বানাতে পার না।”

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads