বুধবার, ১ জুলাই, ২০১৫

মন্ত্রীদের দায়মুক্তি দেয়ার চেষ্টা?


দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দু’জন বর্তমান এবং একজন সাবেক মন্ত্রীকে নিয়ে আবারও জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। নিজেদের বক্তব্য ও কর্মকান্ডের কারণে অনেক আগে থেকে নিন্দিত ও বিতর্কিত এই তিনজনের মধ্যে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করা হয়েছে টিআইবি’র পক্ষ থেকে। কারণ ব্যাখ্যাকালে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক জানিয়েছেন, খাদ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পচা ও খাবার অনুপযোগী গম আমদানির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। অন্যদিকে ত্রাণমন্ত্রী মায়া জ্ঞাত আয়ের বাইরে বিপুল অর্থের মালিক হওয়ায় দুদকের মামলায় ১৩ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী। তাকে আর্থিক জরিমানাও করেছে আদালত। ২০১০ সালে সরকারের ক্ষমতা খাটিয়ে দুদকের ওই মামলা এবং নিজের সাজা বাতিল করালেও সম্প্রতি সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ এক রায়ে দণ্ড বাতিল করে দেয়া আদেশ বাতিল করায় বলা হচ্ছে, মন্ত্রীর সাজা বহাল রয়েছে। রায়টির পরিপ্রেক্ষিতে আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দন্ডিত হওয়ায় এবং সংবিধানের ৬৬/২(গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অপরাধ নৈতিক স্খলনের পর্যায়ে পড়ে বলে জনাব মায়া আর সংসদ সদস্য পদে থাকতে পারেন না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উচিত তাকে মন্ত্রিসভা থেকেও বের করে দেয়া। অন্যদিকে দুই মন্ত্রীর কাউকেই বিদায় নিতে বা সমস্যায় পড়তে হয়নি। তারা এমনকি সংসদেও যাচ্ছেন!
ওদিকে দু’জন মন্ত্রীকে নিয়ে শোরগোলের মধ্যেই দৃশ্যপটে এসেছেন সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী। গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কের এক অনুষ্ঠানে রাসূলুল্লাহ (সা.), হজ্ব এবং তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে ধৃষ্টতাপূর্ণ কটূক্তি করায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্নস্থানে মামলা দায়ের হতে থাকে, তাকে গ্রেফতার করার দাবিতে আন্দোলনও শুরু হয়। সরকার দৃশ্যত নতি স্বীকার করলেও লতিফ সিদ্দিকীকে যথেষ্ট সময় দিয়েছিল। এই সুযোগে লতিফ সিদ্দিকী প্রথমে ভারতে চলে যান এবং সেখান থেকে এসেই আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এতদিন কারাগারেই ছিলেন সাবেক এ মন্ত্রী, যদিও বেশিরভাগ সময় চিকিৎসার নামে তাকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে রাজকীয় পরিবেশে রাখা হয়েছে। ২৯ জুন তিনি যখন জামিনে মুক্তি পান তখনও তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিকই দেখা গেছে। বর্তমান পর্যায়ে কথা উঠেছে একটি বিশেষ কারণে। মন্ত্রিত্ব না থাকলেও লতিফ সিদ্দিকী এখনো সংসদ সদস্য পদে বহাল রয়েছেন। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, সংসদে লতিফ সিদ্দিকীর সদস্যপদ থাকা-না থাকার বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয়ভাবে তাকে এখনো কিছু জানানো হয়নি। দলটি জানালে সে চিঠি তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠাবেন। কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে সংসদ সচিবালয়কে জানালে তার ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। অর্থাৎ অন্য অনেক বিষয়ের মতো লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়টিকেও অনিশ্চিত করে ফেলা হয়েছে।
বাস্তবে এভাবেই দ্বিমুখী নীতির বাস্তবায়ন হচ্ছে। আপত্তির কারণ হলো, বরখাস্ত, অপসারণ, মামলা দায়ের, চার্জশিট তৈরি এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার মতো কার্যক্রমের ব্যাপারে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের অনেক ‘সুনাম’ রয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে দিনের পর দিন ধরে পুলিশকে দিয়ে নির্যাতনেও জুড়ি নেই তাদের। সে একই ক্ষমতাসীনদের আবার দু’ রকমের, এমনকি পরস্পরবিরোধী নীতিও অবলম্বন করতে দেখা যাচ্ছে। আলোচ্য তিন মন্ত্রীর ব্যাপারে পক্ষপাতিত্ব দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি যদি উল্টো হতো অর্থাৎ এর কোনো পর্যায়ে যদি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কেউ জড়িত থাকতেন তাহলে অবস্থা কেমন এবং কতটা ভয়ংকর হতো সে কথা নিশ্চয়ই কল্পনা করা যায়। কারণ, বিরোধী দলের কেউ হলে তাদের সামান্য ছাড় দেয়া হচ্ছে না। সরকার এমনকি বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচিত মেয়র ও অন্য জনপ্রতিনিধিদের সাজানো মামলায় পর্যন্ত ফাঁসিয়ে দিচ্ছে, পুলিশকে দিয়ে চার্জশিট দাখিল করাচ্ছে অতি দ্রুততার সঙ্গে। মেয়রদের অনেককে বরখাস্ত ও অপসারণ করার কার্যক্রমও এরই মধ্যে গুছিয়ে এনেছেন ক্ষমতাসীনরা। সে একই গোষ্ঠীকে যদি বিশেষ জনাকয়েকের জন্য অন্য পন্থা অবলম্বন করতে এবং নানা কথার মারপ্যাঁচে তাদের বাঁচিয়ে দেয়ার জন্য তৎপরতা চালাতে দেখা যায় তাহলে জনমনে সংশয়ের সৃষ্টি হতেই পারে। এজন্যই আমরা মনে করি, সরকারের উচিত বিতর্কিত মন্ত্রীদের ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া। পদক্ষেপ নেয়ার সময় জনমতের পাশাপাশি সংবিধান ও আইনের প্রতিও লক্ষ্য রাখতে এবং যথোচিত সম্মান দেখাতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads