শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১২

মুদি দোকানি থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক, হলমার্ক কেলেঙ্কারির নায়ক তানভীরের বিলাসী জীবন



মাত্র এক দশক আগে আগারগাঁও তালতলা বাজারে ছোট একটি মুদি দোকান ছিল তার। এ দোকান চালাতেন পিতাকে সঙ্গে নিয়ে। এতে সংসার চলতো না তাদের। এক সময় সংসারের অভাব অনটন ঘোচাতে মাত্র ৩০০০ টাকা বেতনে একটি গার্মেন্টে চাকরি নেন। মাত্র এক দশক পরে সেই গার্মেন্ট শ্রমিক এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। রাজকীয়, বিলাসী জীবন তার। মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় আলীশান বাড়ি। চোখ ধাঁধানো সেই বাড়ির অন্দরমহল। আর বাড়ির পাশেই গাড়ির গ্যারেজ। তার নিজের ২৭টি পাজেরো, প্যারাডো, ল্যান্ড ক্রুজার ও প্রাইভেট কার। সোনালী ব্যাংক রূপসী বাংলা শাখার হলমার্ক কেলেঙ্কারির নায়ক হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর মাহমুদ তফসিরই হলেন সেই মুদি দোকানি- গার্মেন্ট শ্রমিক। এখন যিনি হাজার কোটি টাকার মালিক।
সোনালী ব্যাংকের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর হলমার্ক ও তানভীর এখন দেশব্যাপী আলোচনায়। সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার প্রায় অর্ধেকই নিয়েছেন তিনি। মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় চোখ ধাঁধানো রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি। বাড়ির ভেতরটা যেন স্বর্গপুরী। বিদেশী সব কারুকার্য খচিত ফিটিংস, ঝাড়বাতি। ঝকঝকে তকতকে দামি সব গাড়ি। শেওড়াপাড়ার এ বাড়ির পাশেই বিশাল গাড়ির গ্যারেজ। পাজেরো, প্যারাডো, ল্যান্ড ক্রুজার মিলে বড় গাড়ি ১৫টি। প্রাইভেট কার ১২টি। যখন যেটি পছন্দ হয় সেটি নিয়ে বের হন। তানভীর চলেন, রাজকীয় স্টাইলে। রাজপথে তার গাড়ির আগে পিছে থাকে ১০টি গাড়ি। এসব গাড়িতে থাকে তার সশস্ত্র ক্যাডার। এরা সবাই তার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত। মানুষকে খাওয়ানোর জন্য কখনও একটি দু’টি গরু কিনেন না, গরু ক্রয় করেন ট্রাক ভরে। এখন গ্রামের বাড়িতে যান ঘন ঘন। সেখানে উৎসব করেন মানুষকে খাওয়ান, সংবর্ধনা নেন। চলাফেরা করেন ক্ষমতাধর বড় বড় লোকদের সঙ্গে। তার ২০৫/৪ রোকেয়া সরণি শেওড়াপাড়ার কার্যালয়ে মাঝেমধ্যে আসেন বর্তমান সরকারের একজন উপদেষ্টা, একজন প্রতিমন্ত্রী কয়েকজন এমপি। এখন তার বিলাসী জীবন হলেও মাত্র এক দশক আগেও ছিলেন কপর্দকশূন্য। থাকতেন শেওড়াপাড়ার ভাড়ার বাসায়।
২০০১ সালেও আগারগাঁও তালতলা বাজারে ছোট্ট একটি মুদি দোকান ছিল তানভীরের পিতার। সকালে-বিকালে মুদি দোকানে পিতার সহযোগী ছিলেন তিনি। সংসারের নিদারুণ অভাব অনটন ঘোচাতে মাত্র তিন হাজার টাকা বেতনে একটি গার্মেন্টে চাকরি নেন তানভীর। তার উত্থান শুরু তত্ত্বাবধায়ক জমানার শেষ দিকে। গার্মেন্টের চাকরি ছেড়ে নিজে একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি দেন। ওই সময় তার সঙ্গে সম্পর্ক হয় সোনালী ব্যাংক শেরাটন শাখার সে সময়ের ম্যানেজারের সঙ্গে। ওই ম্যানেজারকে ধরে অল্প কিছু টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাবসা শুরু করে করেন, সেটা ২০০৬ সাল। ২০০৮ সালে সরকার পরিবর্তন হলে তানভীর সম্পর্ক গড়ে তোলেন বর্তমান সরকারের একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টার সঙ্গে। ওই উপদেষ্টাকে তিনি তার প্রতিষ্ঠান হলমার্কের উপদেষ্টা করেন। ২০০৯ সাল থেকে সোনালী ব্যাংকে তানভীরের ঋণ বর্ধিত হতে শুরু করে অস্বাভাবিকভাবে সকল নিয়মনীতি উপেক্ষা করে।
ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চেয়ে তানভীর বেশি নজর দেন জমি কেনার দিকে। মিরপুর শেওড়াপাড়া এলাকায়। একের পর এক জমি কিনতে থাকেন বেশি দামে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত তানভীর কম করে হলেও ত্রিশটি দামি গাড়ি উপহার দিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের বড় বড় কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের। দেড় শ’ জন আনসার পাহারা দেয় রোকেয়া সরণীর হলমার্কের প্রধান কার্যালয় সহ তানভীরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তানভীরের নিজের কাছে থাকে একটি পিস্তল। সব সময় চলেন বিশাল বহর নিয়ে। মিরপুর শেওড়াপাড়া এলাকা এবং সাভারের হেমায়েতপুরে আছে তার বিশাল সমর্থক ক্যাডার বাহিনী। শেওড়াপাড়া এলাকার তার এক প্রতিবেশী জানান, তানভীর তার বর্তমানের রাজকীয় বাড়িতে উঠেছেন মাত্র ২ বছর হলো, এর আগে ওই মহল্লারই একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সপরিবারে। নতুন বাড়িতে ওঠার পর গত দুই বছর ধরে ঈদের সময় এক এলাহী কাণ্ড দেখা যায় তার বাড়ির সামনে। পুরো রমজান মাস ধরে গরু, মহিষ, উট আসে ট্রাক বোঝাই করে। ওই সব গরু, মহিষ, উট জবাই করে খাওয়ানো হয় রোজাদারদের। দান খয়রাতও করেন যথেষ্ট।
মিরপুর এলাকার মানুষ জানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। সে কারণে এখন ঘন ঘন এলাকায় যাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে নিয়ে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads