বৃহস্পতিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১২

আগামী নির্বাচন নিয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার উদ্বেগ : দেশপ্রেমিকদের উচিত এখনই সতর্ক হওয়া




বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন এবং ক্ষমতার পালাবদল নিয়ে নিজেদের মাথাব্যথার প্রকাশ ঘটিয়েছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। ২৯ আগস্ট দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার অনলাইন সংস্করণে বলা হয়েছে, এসব সংস্থার ধারণা, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে জিতে বেগম খালেদা জিয়াই ক্ষমতায় আসবেন। বিএনপির নেত্রী যে ভারতের ‘মিত্র’ নন এবং তিনি যে ভারতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুসম্পর্ককে ‘তাঁবেদারি’ হিসেবে তুলে ধরছেন রিপোর্টে তারও উল্লেখ রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ধারণা, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলে শেখ হাসিনার সরকারের মাধ্যমে ভারতের গত কয়েক বছরের সব অর্জনই নস্যাত্ হয়ে যাবে। ভারতবিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোও বাংলাদেশ থেকে সশস্ত্র কর্মকাণ্ড শুরু করবে। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় ধস নামার এবং বিএনপির সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলেছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র যুদ্ধকে পর্যুদস্ত করাসহ বিভিন্ন ব্যাপারে ভারতকে ‘অভূতপূর্ব সহযোগিতা’ করা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের কাছ থেকে তিস্তাচুক্তিসহ কিছুই অর্জন করতে পারেননি। সে কারণে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তায়ই শুধু ধস নামেনি, ভারতের প্রতিও বাংলাদেশীদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব শক্তিশালী হয়েছে। এমন অবস্থার সুযোগেই বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসতে পারেন। কারণ, জনগণের মধ্যে তার ভারতবিরোধী পরিচিতি রয়েছে। রিপোর্টে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অবশ্য বিপরীত কিছু সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেছে। তাদের ধারণা, বিভিন্ন মামলায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কারাদণ্ড হতে পারে। তাছাড়া আগামী বছরের মধ্যে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদেরও দণ্ড দেয়া হবে। ফলে নির্বাচনে তারা প্রার্থী হতে পারবেন না। তেমন অবস্থাতেই শুধু আওয়ামী লীগের পক্ষে আবারও ক্ষমতায় ফিরে আসা সম্ভব।
আমরা মনে করি, ক্ষমতার পালাবদলসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এই রিপোর্ট শুধু আশঙ্কাজনক নয়, আপত্তিজনকও। এটা অবশ্য নতুন খবর নয় যে, এসব সংস্থা বাংলাদেশে সব সময়ই তত্পরতা চালাচ্ছে। রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও তথাকথিত সুশীল সমাজসহ দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের এজেন্ট ও সেবাদাসদের সংখ্যাও হাজার হাজার। সুতরাং বাংলাদেশের সব বিষয়ই তাদের নখদর্পণে থাকার কথা। রয়েছেও। প্রশ্ন উঠেছে অন্য একটি বিশেষ কারণে। কারণটি হলো, ক্ষমতার পালাবদলের মতো অত্যন্ত গুরুতর বিষয় সংক্রান্ত কোনো রিপোর্ট যেখানে গোপন রাখার কথা, সেখানে সংবাদ মাধ্যমকে দিয়ে তার ব্যাপক প্রচার করানো হয়েছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সুচিন্তিত কৌশল ও পরিকল্পনার ভিত্তিতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে দিয়ে ভারতের নীতিনির্ধারকরা একই সঙ্গে কয়েকটি উদ্দেশ্য হাসিল করতে চেয়েছেন। মন্ত্রিত্বসহ ক্ষমতার ভাগ পাওয়া-না পাওয়ার মতো বিভিন্ন কারণে আওয়ামী মহাজোটের শরিকদের মধ্যে সৃষ্ট অসন্তোষ প্রশমিত করে দলগুলোকে আবারও ঐক্যবদ্ধ করা একটি প্রধান উদ্দেশ্য। ভারতীয়দের পরিষ্কার বার্তা হলো, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে না পারলে মহাজোটের কোনো নেতাই রেহাই পাবেন না। জেনারেল এরশাদকে তো বটেই, ইনু-মেনন ও দিলীপ বড়ুয়ার মতো অনেক নেতাকেও জেলের ঘানি টানতে হবে। সুতরাং বৃদ্ধ বয়সে জেল খাটার পরিণতি এড়ানোর জন্য হলেও নেতাদের উচিত মহাজোটকে শক্তিশালী করা, শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা এবং বেগম খালেদা জিয়াকে প্রতিহত করা। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর রিপোর্টে বিএনপির জন্যও বার্তা রয়েছে। বিএনপিকে বুঝতে হবে, ভারতের প্রতি ‘বন্ধুসুলভ’ না হওয়া পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে ক্ষমতায় যাওয়া সহজে সম্ভব হবে না। এর মাধ্যমে বিএনপিকে প্রকৃতপক্ষে ভারতের অধীনতা স্বীকার করে নেয়ার জন্যই চাপ দেয়া হয়েছে। এরপরও বিএনপি যদি ঘাড় বাঁকিয়ে রাখে তাহলে সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কেও স্পষ্ট আভাস রয়েছে রিপোর্টে। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিভিন্ন মামলায় কারাদণ্ড দেয়া হবে, তারা নির্বাচনেই দাঁড়াতে পারবেন না। ওদিকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীকেও ছিটকে পড়তে হবে। এভাবে কথার মারপ্যাঁচে একই সঙ্গে আওয়ামী মহাজোট এবং বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে নগ্নভাবে ভয় দেখানো হয়েছে। রাজনীতিতে এ ধরনের কৌশলকে ‘ব্ল্যাকমেইলিং’ বলা হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের সে ‘ব্ল্যাকমেইলিং’-ই করতে চেয়েছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
আমরা রিপোর্টটির নানামুখী উদ্দেশ্যকে গুরুতর মনে না করে পারি না। লক্ষণীয় বিষয় হলো, রিপোর্টের কোথাও কিন্তু আওয়ামী লীগকে আবারও জিতিয়ে আনার জন্য হলেও বাংলাদেশের কোনো দাবি পূরণের ব্যাপারে সামান্য তাগিদ দেয়া হয়নি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সর্বতোভাবে শুধু ভারতের স্বার্থকেই প্রাধান্যে রেখেছে। ভারতীয়দের জন্য সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক। একই কারণে বাংলাদেশের জনগণেরও উচিত এখনই সতর্ক হওয়া, ভারতের পাশাপাশি আওয়ামী মহাজোটের গতিবিধির প্রতি লক্ষ্য রাখা এবং যথাসময়ে যথাযথ ভূমিকা পালন করার প্রস্তুতি নেয়া।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads