বুধবার, ২৯ আগস্ট, ২০১২

খালেদার ক্ষমতায় ফেরা নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত



খালেদা জিয়ার ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা প্রবল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতে উদ্বেগ বাড়ছে। ২০১৪
সালের দিকে ঢাকায় ক্ষমতার পালাবদল হওয়ার সম্ভাবনা তীব্র হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। তাই আওয়ামী লীগের পড়ে যাওয়া জনপ্রিয়তাকে ধরে রাখতে তীব্র আগ্রহ দেখাচ্ছে তারা। এ জন্য তারা বছরজুড়ে তৎপরতা বাড়াবে। তাদের আশঙ্কা, ক্ষমতার এই পালাবদল ঘটলে বাংলাদেশকে ভারতবিরোধী শক্তিগুলো ফের ব্যবহার করবে এবং আগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাবে। গতকাল অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়াতে ‘ইন্ডিয়া ইজ ওরিস কুড মাউন্ট উইথ খালেদা জিয়াস এক্সপেক্টেড রিটার্ন টু পাওয়ার ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। এর লেখক ভারতী জৈন। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে যেসব সন্ত্রাসী সংগঠন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছিল শেখ হাসিনা সরকার তাদের ঘাঁটি ভেঙে দিয়েছে। তার সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০১৪ সালের জানুয়ারির শেষের দিকে। বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল একটি বহুল পরিচিত নীতিতে পরিণত হয়েছে। ফলে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক তীব্র প্রতিপক্ষ বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ফিরবেন বলেই মনে হচ্ছে। খালেদা জিয়া ভারতের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন নন বলে পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে তিনি শেখ হাসিনার ক্ষমতার মেয়াদের ভুলত্রুটিকে পুঁজি করে এগোচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি ভারতের আজ্ঞাবাহী হিসেবে দেখাতেই ব্যস্ত রয়েছেন। জঙ্গি সংগঠন ও বিএনপি’র অংশীদার জামায়াতে ইসলামীর মতো বাংলাদেশভিত্তিক রাষ্ট্রবিরোধী সংগঠনগুলো উত্তর-পূর্ব ভারতীয় জঙ্গি গ্রুপগুলোর কর্মকাণ্ডে তাদের সমর্থন ও আশ্রয় দেয়া শুরু করতে পারে। তারা প্রতিবেশী দেশকে নিরাপদ স্বর্গ হিসেবে ব্যবহার করে। এছাড়াও তারা পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে অনুপ্রবেশের একটি পথ করে দিচ্ছে।
বাংলাদেশী যোগসূত্র আছে এমন সন্ত্রাসী ঘটনার তদন্তের পাশাপাশি বাংলাদেশে ভারতীয় জঙ্গিরা যে নিরাপদ স্বর্গ রচনা করেছিল তা ভেঙে দিতে হাসিনা সরকারের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সহযোগিতা পেয়েছে। হাসিনার অধীনে আওয়ামী লীগ সরকারের জনপ্রিয়তা যখন ডুবে যাচ্ছে তখন সেই জনপ্রিয়তা চলে যাচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি’র ঘরে। তাই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আশঙ্কা- খালেদা জিয়া যদি ক্ষমতায় ফেরেন তাহলে গত কয়েক বছরে যে অর্জন হয়েছে তা উল্টে যাবে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এটা কোন গোপন বিষয় নয় যে- ভারত বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বাংলাদেশকে ব্যবহার করছে পাকিস্তান ভিত্তিক সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। পাকিস্তানি তানজিমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে বাংলাদেশের সন্ত্রাসী সংগঠন হুজি। ভারতে আইএসআই মদতপুষ্ট অনেক সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। যারা এ হামলা চালিয়েছে তারা বাংলাদেশকে ব্যবহার করে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে না হয় হামলার পর তারা পালিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সেখানে চলে গেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে আইএসআই’র সম্পর্ক থাকার আরও অনেক ঘটনা আছে। যেমন- ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার নির্বাচনী খরচ সরবরাহ করেছে আইএসআই। এ কথা প্রকাশ করেছেন অন্য কেউ নন, আইএসআই’র সাবেক প্রধান আসাদ দুরানি। ১৯৯৬ সালের মার্চে গেরিলা প্রশিক্ষণ নিতে ঢাকা থেকে ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড (এনএসসিএন)-এর ক্যাডাররা পাকিস্তানে যায়। আইএসআই মদতপুষ্ট কারিগরি বিশেষজ্ঞরা অভিযান পরিচালনায় উলফাকে প্রশিক্ষণ ও নাগাল্যান্ডে যোগাযোগ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠায় সরঞ্জাম দিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়। অস্ত্রের একটি চালান পর্যবেক্ষণ শেষে করাচি থেকে ফেরার পথে ২০০০ সালের জানুয়ারিতে এনএসসিএন (আই-এম) প্রধান টি মাউভাহ’কে গ্রেপ্তার করা হয় ব্যাংকক বিমানবন্দরে। আটক করা হয় অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স (এটিটিএফ)-এর বেশ কয়েকজন ক্যাডারকে। এতে প্রকাশ হয়ে পড়ে যে, ১৯৯৭ সালে আফগানিস্তানের কান্দাহারে এটিটিএফ-এর ৮ ক্যাডেটকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়া ছাড়াও এ সংগঠনের ৫৮ লাখ রুপির তহবিলে ২০ হাজার ডলার আর্থিক সহায়তা দেয় আইএসআই। এতে অভিযোগ আছে- মালটা, মালফা, সিমি ও ইন্ডিয়ান মুজাহিদীনের মতো কট্টর ইসলামপন্থি গ্রুপগুলোকে অর্থ সহায়তা দিচ্ছে আইএসআই ও বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী।
অবশ্যই আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তার ধস ঠেকাতে ভারতীয় মহলগুলোর তীব্র আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের নেতিবাচক দিককে পাল্টে দেয়ার ক্ষেত্রে তারা কমই সফল হয়েছে। শেখ হাসিনা ভারতকে বড় ধরনের কোন সমঝোতায় রাজি করাতে পারেননি বলে বাংলাদেশে একটি নেতিবাচক ধারণা আছে। সেই ধারণাকে সংশোধন করতে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি, পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নে সহায়তা ও ছিটমহল বিনিময় ইস্যুতে ইতিবাচক অগ্রগতি বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। আর এটা শুধু তখনই সম্ভব হবে যখন ক্ষমতাসীন ইউপিএ সরকার তাদেরকে বিপদে ফেলা শরিক তৃণমূল কংগ্রেসকে তিস্তা ও ছিটমহল ইস্যুতে কট্টর অবস্থান থেকে সরে আসতে রাজি করাতে পারবে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার পায়ের তলা থেকে সরে যাওয়া মাটি ফিরিয়ে আনতে বছরজুড়ে প্রচেষ্টা তীব্র করা হবে। এসব কথা বলেছেন সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তারা বলেন, খালেদা জিয়ার জোটের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং এর নেতাদের যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি তার জোটের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তাকে নির্বাচনের আগে বদলে দিতে পারে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads