বুধবার, ২৯ আগস্ট, ২০১২

সোনালী ব্যাংকের অর্থ কেলেঙ্কারি : অর্থমন্ত্রী আসলে ঠিক কী চান?



গত চার বছর ধরে লুটপাট, চুরি, দুর্নীতি কীভাবে ছড়িয়েছে সেটা এখন আর কোনো গোপন বিষয় নয়। লাগামহীনভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে জনগণের পকেট কাটা এখন পুরনো হয়ে গেছে। শেয়ারবাজার লুটের ঘটনায় সরকারের ভূমিকাও অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য থেকেই পরিষ্কার। সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ও সুপারিশে যাদের কথা উঠে এসেছে, অর্থমন্ত্রী তাদের নাম প্রকাশ করেননি, তারা এতই প্রভাবশালী। এছাড়া দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পর এখন শুরু হয়েছে ভৌতিক বিলের ছড়াছড়ি। আর দেশজুড়ে টেন্ডারবাজি, চাকরিতে নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্য, সরকারি দান-অনুদান এমনকি দুস্থ ভাতা লুটপাটের ঘটনাও অনেকটা গা-সওয়া হয়ে গেছে। সরকারের মেয়াদ লক্ষ্য করে মানুষ মুখিয়ে আছে শেষ জবাব দিতে। এ অবস্থায় ব্যাংকে গচ্ছিত জনগণের টাকার ওপর নজর পড়েছে লুটেরাদের। ঋণখেলাপি হওয়ার ঝামেলা এড়িয়ে এখন সরাসরি জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা মেরে দেয়া যে মোটেই কঠিন কিছু নয়, সেটাই প্রমাণ হলো সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাত্ করার ঘটনা থেকে। চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী এই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে তদন্তের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ৩০ জনের বেশি ব্যাংকার অভিযুক্ত হন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়। এর পরদিন এই জালিয়াতির কারণে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ ভেঙে দেয়ার সুপারিশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়েও চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব থেকে মনে হয়েছিল দেরিতে হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটু নড়েচড়ে বসেছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আগের মতোই এক বোমা ফাটানো মন্তব্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এখতিয়ার নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি সোনালী ব্যাংকের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি দেয়াকে সরাসরি এখতিয়ার বহির্ভূত বলে ব্যাংক জালিয়াতদের মনে সাহস জুগিয়েছেন বলাটা মোটেই অসত্য হবে না। কেন অর্থমন্ত্রী এমন মন্তব্য করলেন সেটা অনেকের কাছেই বোধগম্য হচ্ছে না। কারণ ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৫, ৪৬ ও ৪৭ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক যে কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে সরকার অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। এই সুযোগে এসব ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদে স্থান হয় সরকারদলীয় ব্যক্তিদের। এর ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে দলবাজি, অনিয়ম-দুর্নীতি-লুটপাট কীভাবে শিকড় গেড়েছে সেটা কারও অজানা থাকার কথা নয়। তবে এবারের ঘটনা সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
দেশের ব্যাংকগুলোতে যেখানে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকার বেশি, সেখানে সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা থেকে মাত্র দুই বছরেই জালিয়াতির মাধ্যমে তিন হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা এক কথায় ভয়াবহ বলাটা যথেষ্ট নয়। এ অবস্থায় এখতিয়ার নিয়ে যে বিতর্ক উঠেছে তাতে জনগণের মাথা ব্যথা না থাকাই স্বাভাবিক। কারা ব্যাংকের গচ্ছিত টাকা আত্মসাত্ করেছে তদন্তে সেটা জানাজানি হওয়ার পরও কেন তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না সেটাই এখন সবার প্রশ্ন। চুরি যাওয়া জনগণের টাকা ফেরত আনাটাও জরুরি। যাদের মুখে জনগণের স্বার্থ রক্ষা, আইনের শাসন নিয়ে তুবড়ি ছোটে, এত কিছুর পরও তাদের নিশ্চুপ থাকাটা সবারই চোখে পড়তে বাধ্য। মানুষ ভুলে যায়নি, বিগত অসাংবিধানিক জরুরি অবস্থার সরকারের আমলে বিএনপির অনেক নেতাকে টাকা নয়ছয় করার অভিযোগে প্রথমেই গ্রেফতার করে দুদক মামলার পথ ধরেছিল। তাহলে এখন এত বড় জালিয়াতি নিয়ে দুদকের তদন্তের পাশাপাশি অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা যাবে না কেন? অর্থমন্ত্রী উল্টাপাল্টা কথা বলে শেয়ারবাজার লুটেরাদের মতো এই ব্যাংক জালিয়াতদেরও কি বাঁচাতে চাইছেন? উনি ও আওয়ামী মহাজোট সরকার কি এ ধরনের বিশাল দুর্নীতি নিয়ে কেউ কথা না বলুক এটাই চান? এভাবে ব্যাংকের টাকা লুটপাট অব্যাহত থাকুক এটাই কি তাদের কাম্য? এই লুটেরারা কি সরকারের এতই কাছের মানুষ যে তাদের রক্ষার দায়িত্ব খোদ অর্থমন্ত্রীর ওপর বর্তেছে!

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads