শনিবার, ১১ আগস্ট, ২০১২

৬ সাংসদ নিয়েছেন দুটি করে, ঢাকায় জমি আছে তবু ১১ সাংসদ প্লট নিয়েছেন

নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী পাওয়ার যোগ্য নন, মহাজোট সরকারের এমন অন্তত ১১ জন সাংসদ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) উত্তরা ও পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট নিয়েছেন। আরও সাতজন সাংসদের তথ্য পাওয়া গেছে যাঁরা দুটি প্রকল্পেই প্লট পেয়েছেন। 
১১ সাংসদ হলেন—ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্, রহমত আলী, মো. আবদুল ওয়াদুদ, প্রয়াত সাংসদ লুৎফুল হাই, সদস্যপদ বাতিল হওয়া সাংসদ আবুল কাশেম, মিজানুর রহমান খান, জহিরুল হক ভূঁইয়া, মুরাদ হোসেন, নারী সাংসদ রত্না হাওলাদার, অপু উকিল ও তহুরা আলী।
প্লট পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজউকের শর্ত হচ্ছে, নিজের বা স্ত্রীর নামে রাজউক এলাকায় জমি বা ফ্ল্যাট থাকলে তিনি প্লটের জন্য আবেদনের অযোগ্য বিবেচিত হবেন। প্লট পেতে আবেদনকারীকে নিজের বা স্ত্রীর নামে জমি বা ফ্ল্যাট নেই—এমন একটি হলফনামাও দিতে হয়। 
ঢাকা-১৬ (মিরপুর-পল্লবী) আসনের সাংসদ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্ পল্লবীর হারুনাবাদের ৫/১ মাদবর মোল্লা সড়কে দোতলা বাড়ির মালিক। তাঁর নামে সেনপাড়া মৌজায় ৭ নম্বর দাগে ৪ দশমিক ৭৮ কাঠা জমিও আছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরের আয়কর বিবরণীতে দেওয়া সম্পদের হিসাব অনুযায়ী রাজধানীতেই তাঁর আরও ৩০ বিঘা জমি থাকার কথা উল্লেখ আছে। তিনি উত্তরায় পাঁচ কাঠার প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন।
রাজশাহী-৫ আসনের সাংসদ মো. আবদুল ওয়াদুদ বনানী এফ ব্লকের ৭ নম্বর সড়কে একটি ফ্ল্যাটের মালিক। তিনি উত্তরা ও পূর্বাচল দুই জায়গায় প্লট নিয়েছেন। তবে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, পূর্বাচলে তিনি আবেদন করেননি।
আবুল কাশেম টাঙ্গাইল-৭ আসন থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে নির্বাচিত হন। সম্প্রতি আদালতের রায়ে তাঁর সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় দেখা যায়, তাঁর ২৫ কোটি টাকা মূল্যের একটি বাড়ি রয়েছে রাজধানীর গুলশানে। নারায়ণগঞ্জ এলাকায় ৬০২ শতাংশ জমি আছে। তবু পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট নিয়েছেন তিনি।
ঢাকা-৬ আসনের সাংসদ মিজানুর রহমান খানের নামে যাত্রাবাড়ীতে ১৬ শতাংশ জমি আছে। ৫৫ তনুগঞ্জ লেন, সূত্রাপুরে বাড়ি আছে। উত্তরায় ৭ নম্বর সেক্টরের ৩৩ নম্বর সড়কের ১৮ নম্বর বাড়িতে ১৯৫৪ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটও আছে। দিলকুশায় ২৮৮১ বর্গফুট ও কাকরাইলে ৫৩০ বর্গফুট বাণিজ্যিক ফ্লোরের মালিক তিনি। তিনিও পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট নিয়েছেন।
নরসিংদী-৩ আসনের সাংসদ জহিরুল হক ভূঁইয়া খিলগাঁওয়ের ২৭১/১/বি, তালতলায় পৌনে তিন কাঠা জমির ওপর পাঁচতলা বাড়ির মালিক। উত্তরায় পাঁচ কাঠার প্লট নিয়েছেন তিনিও।
জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের সাংসদ মুরাদ হোসেনের ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ জমি আছে উত্তরায়। উত্তরাতেই পাঁচ কাঠার প্লট নিয়েছেন সরকারি দলের এই সাংসদ। 
সংসদ নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনে দেওয়া জাতীয় সম্পদের তথ্য অনুযাীয়, পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার গুলশানের ৪৪ নম্বর সড়কের ১২১/ডি নম্বর পাঁচতলা ভবনের মালিক। তাঁর স্ত্রী সংরক্ষিত আসনে নারী সাংসদ রত্না হাওলাদার পূর্বাচলে সাড়ে সাত কাঠার প্লট পেয়েছেন।
জানতে চাইলে রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, মগুলশানে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে বরাদ্দ পেয়েছি। আর আমার স্ত্রী নারী সাংসদ হিসেবে প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন।’
আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল উত্তরায় রাজউক থেকে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন। ধানমন্ডিতে তাঁর একটি ফ্ল্যাটও আছে। অথচ তাঁর স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ অপু উকিল পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট নিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের প্রয়াত সাংসদ লুৎফুল হাইয়ের ৩২/১ শাহজাহান রোড, মোহাম্মদপুরে ১১৩০ বর্গফুটের দুটি ফ্ল্যাট আছে। মোহাম্মদপুরে ২ শতাংশ জায়গায় বাড়িও আছে। তাঁর নামেও পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ হয়েছে। 
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রহমত আলী শংকরের ৩৩৮ জাফরাবাদে বাড়ির মালিক। প্রবীণ এই সাংসদও উত্তরায় পাঁচ কাঠা জমি বরাদ্দ নেন।
সংরক্ষিত নারী আসনের আরেক সাংসদ তহুরা আলীর নিজ নামে দুই হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট আছে গুলশানে। তিনিও উত্তরায় পাঁচ কাঠার প্লট নিয়েছেন।
জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান বলেন, মন্ত্রী-সাংসদদের প্লট বরাদ্দের বিষয়টি যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। কেউ একাধিক প্লট নিলে একটি বাতিল করা হবে। তা ছাড়া মিথ্যা হলফনামা দেওয়া হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ছয় সাংসদের দুই প্রকল্পে প্লট: রাজউকের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, সরকারি দলের সাংসদদের মধ্যে আজিজুল হক চৌধুরী, মো. আবদুল ওয়াদুদ, রণজিত কুমার রায়, মো. আলী আজগর, জুনাইদ আহমদ ওরফে পলক, সাধন চন্দ্র মজুমদারের উত্তরা ও পূর্বাচলে প্লট নেওয়ার তথ্য আছে। 
দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত সরকারি দলের সাংসদ আজিজুল হক চৌধুরী এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুটো পেয়েছিলাম। একটা ছেড়ে দিয়েছি।’ 
নাটোর থেকে নির্বাচিত সাংসদ জুনাইদ আহমেদ জানান, তিনিও একটি রেখে অপরটি ছেড়ে দিয়েছেন।
এছাড়া, ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে দেখা যায়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী নিকুঞ্জ এলাকার লেক ড্রাইভে ৪২ নম্বর প্লট রাজউক থেকে বরাদ্দ পেয়েছেন। তাঁর স্ত্রীর নামেও রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে ১০ কাঠার প্লট নেওয়া হয়েছে গত সরকারের সময়ে। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরের আদাবর এলাকায় তাঁর জমি আছে। 
জানতে চাইলে নূর-ই-আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এই সরকারের আমলে কোনো প্লট পাইনি। রাজউক একেক সময় একেক নীতিমালা করে। নীতিমালা কাভার করলে প্লটের জন্য আবেদন করা যাবে না কেন?’
রাজউকের চেয়ারম্যান মো. নুরুল হুদা বলেন, ‘আমরা অনিয়ম পেলে বরাদ্দ বাতিল করছি। এখনো কারও নামে একাধিক প্লট, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের নামে প্লট, মিথ্যা হলফনামা বা কোনো অনিয়মের তথ্য পেলে তা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সব তথ্য কম্পিউটারাইজড হয়ে যাবে। তখন কারও নামে একাধিক প্লট বা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের নামে প্লট পেলে সঙ্গে সঙ্গেই তা বাতিল করা হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads