শুক্রবার, ১০ আগস্ট, ২০১২

বাংলাদেশের গুমের ঘটনা নিয়ে আল জাজিরার অনুসন্ধান : গুমের ঘটনা বেড়েছে ভয়ানক হারে, অনেক গুমের সঙ্গে র্যাব জড়িত, গণতন্ত্র ও অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে



বাংলাদেশের বহুল আলোচিত গুমের ঘটনা নিয়ে গতকাল অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করেছে কাতারভিত্তিক জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল আল জাজিরা। চ্যানেলটির ‘ওয়ান ও ওয়ান ইস্ট’ অনুষ্ঠানে ‘মিসিং ইন অ্যাকশন’ শিরোনামে প্রচারিত প্রায় আধা ঘণ্টার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের ঘটনা বেড়েছে ভয়ানক হারে। গত সাড়ে তিন বছরে ১০০ জনেরও বেশি গুম হয়েছে। আইন ও শালিস কেন্দ্র জানিয়েছে শুধু চলতি অর্থ বছরে ২২ জন অপহরণ হয়েছে। আর এর বেশিরভাগই বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত এসব রহস্যজনক গুমের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জোরালো হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক গুমের ঘটনা বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর গুম হওয়া। অনেক গুমের পেছনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। আইনজীবী সুলতানা কামাল আল জাজিরাকে বলেন, যেভাবে গুমের ঘটনা ঘটছে তাতে মনে হচ্ছে প্রশিক্ষিত লোকজন এর সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশে জনমনে ধারণা জন্মেছে যে গুমের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত। বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার দ্বন্দ্ব দেশকে বিভক্ত করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষমতা দেয়ায় আইনের শাসন দুর্বল হয়ে পড়েছে। ১৬ কোটি মানুষের দেশটিতে রাজনৈতিক সঙ্কট তীব্রতর হওয়ার কারণে গণতন্ত্র ও অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
ড্রিউ অ্যামব্রোসের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিসংখ্যান অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। বিরোধী দলীয় আইনজীবী এমইউ আহমদ পুলিশি হেফাজতে নিহত হয়েছেন।
১৮ দলীয় বিরোধী দলীয় জোট বলছে, তারা এসবের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে। তবে তাদের অভিযোগ পুলিশ সাম্প্রতিক সরকার বিরোধী আন্দোলনে এবং পুলিশি হেফাজতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করছে। এপ্রিলের ১৭ তারিখে যখন ইলিয়াস আলী তার ড্রাইভারসহ গুম হলেন তারপর দেশব্যাপী বিএনপি বিক্ষোভ কর্মসূচি দিল। এ নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। অনেকেই আইনি ফাঁদে পড়ে এখন জেলের অন্ধকার পুরীতে। অনেকে আবার পুলিশের অভিযোগ মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অভিযোগ আছে পুলিশকে দিয়ে এসবের পেছনে মদত জোগাচ্ছে সরকার।
আল জাজিরাকে গুম হওয়া বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমের ছেলে আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, গুমের বিচার না হলে এ ধারা অব্যাহত থাকবে। তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, তারা বাবা একদিন ফিরে আসবেন।
গুমের পরে নিহত গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের ভাই রফিকুল ইসলাম বলেন, আমিনুল বিএনপির একটি সমাবেশে ১০ হাজার লোক সরবরাহ করেছিল বলে অভিযোগ ছিল। এ কারণেই হয়তো তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমিনুল হত্যা মামলার আইনজীবী একেএম নাসিম বলেন, আমিনুল যে গার্মেন্টে কাজ করত তার মালিকপক্ষের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর গভীর সম্পর্ক আছে।
তবে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি তারানা হালিম র্যাবের প্রশংসা করে আল জাজিরাকে বলেন, আপনি যদি কাউকে জিজ্ঞাসা করেন যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তদন্ত কাকে দিয়ে করাবেন তাহলে তিনি র্যাবকেই অগ্রাধিকার দেবেন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads